হোটেলের বাইরে তিনি দাঁড়িয়ে প্রায় দু’ঘন্টা। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। এখন পদ্মাসনে বসেছেন। অসময়ে দল থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। যাঁর জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন, তিনি তাঁকে ডাকেননি। নিজে থেকেই গিয়েছিলেন সাক্ষাৎ প্রার্থী হতে। তবে যাঁর সঙ্গে তিনি দেখা করতে গেলেন, তিনি ফিরেও তাকালেন না। এই দু’জন হলেন—বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দলবদলু নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। হোটেল ছেড়ে হেলিপ্যাডে যাওয়ার সময় শ্যামের ডাকে সাড়া দেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। এমনকী তাঁর দিকে না তাকিয়েই হেলিপ্যাডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলে সুবিধাবাদীদের কোনও জায়গা নেই।
একদা রাজ্যের বস্ত্র, নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী এবং বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে হেরে যান। বাঁকুড়া জেলা সভাপতিও ছিলেন। হঠাৎ দু’মাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে টিকিট পাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি। তাই ক্ষুব্ধ শ্যামা আসেন মমতার সঙ্গে দেখা করতে। তিনিও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সুতরাং শ্যামার একূল–ওকূল দুকূল গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই তিনি বিজেপিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে শুভেন্দু লাভবান হলেও রাজনীতির বাণিজ্যে তিনি লোকসানের মুখই দেখলেন। অপেক্ষমান সাংবাদিকরা তাঁর এখানে আগমনের হেতু জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। আর বলেন, ‘বিজেপিতে প্রার্থী হতে গেলে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিতে হবে। তাই একবার দিদির সঙ্গে কথা বলতে চাই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।’ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চান একথা মুখে না বললেও মনে মনে প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমো দ্বিচারিতা ও সুবিধাবাদীদের পছন্দ করেন না। তাই মুখ ফিরিয়েই রাখলেন।
এদিন হোটেল থেকে হুইল চেয়ারে করে হেলিপ্যাডে চলে যান মমতা। হোটেল থেকে হেলিপ্যাড পর্যন্ত হুইল চেয়ারে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে শ্যামাপ্রসাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি একবারও ঘুরে তাকালেন না।