যেই গোর্খাল্যান্ডের দাবি পাহাড়ের রাজনীতির দিক নির্দেশনা ঠিক করে এসেছে গত বেশ কয়েকটি দশক ধরে, তা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। ২০২১-এর পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণের মলে এখন মোর্চা বনাম মোর্চা। একদিকে যেখানে বিমল গুরুং পাহাড়ে নিজের আধিপত্য ফিরিয়ে আনার ছক কষছেন, অন্যদিকে বিনয় তামাং নিজের জমি ধরে রাখতে মরিয়া। এই আবহে আজ পাহাড়ের তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ সকাল সকাল দার্জিলিঙের পাতলেবাস কমিউনিটি হলে সস্ত্রীক ভোটদান করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-১-এর সভাপতি বিমল গুরুং। এদিন ভোট দিয়ে গুরুং বলেন, 'হিংসা, অশান্তি, গুলি দিয়ে রাজনীতি ঠিক নয়। বাংলায় বিজেপির কোনও সমর্থন নেই। কীভাবে সরকার গড়বে তারা? আরও অনেক সহজ সরল ভাবে রাজনীতি করা উচিত' ২০১৭ সাল থেকে অজ্ঞাতবাসে থাকা বিমল গুরুং ভোটের আগে প্রথমবার জনসমক্ষে আসেন। তাঁর কাছে একুশের ভোট মূলত নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার লড়াই।
বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে বরাবর আলাদা মাত্রা যোগ করেছে পাহাড়ের তিনটি আসন। সেই পাহাড়ের মন জয় করতে ২০১১ সালের পালাবদলের পর গঠন করা হয়েছিল জিটিএ-র। আরও শক্তিশালী হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। পাহাড় 'হাসতে' শুরু করেছিল। তবে সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালের সেই মোর্চাও বদলে গিয়েছে। আজকের মোর্চা আড়াআড়ি ভাবে বিভাজিত। একদিকে বিমল গুরুং এবং তাঁর অনুগামীরা। আর অন্যদিকে বিনয় তামাং এবং তাঁর অনুগামীরা।
বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ২০১৬ সালে পাহাড়ের তিনটি আসন নিজেদের ঝুলিতে ভরেছিল মোর্চা। তবে ২০২১ সালে বিমল গুরুং হাত মিলিয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে। অপরদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিনয় তামাংও তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলছে। এই পরিস্থিতিতে বিমল গুরুঙের সব থেকে বড় পরীক্ষা, পাহাড়ে নিজের আধিপত্য ফিরিয়ে আনা। কারণ গত কয়েক বছরে বিনয় তামাং-অনিল থাপারা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। তৃণমূলের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর। কিন্তু তাতে কোনও কাজ দেয়নি। এই অবস্থায় মমতা পাহাড়ের তিনটি আসনই ছেড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, গুরুং বা তামাংদের মধ্যে যাঁরা জিতবে, তাঁদেরকেই সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে তৃণমূল।
পাহাড়ের পরীক্ষায় পাশ করতে বিমল গুরুঙের ভরসা পোড় খাওয়া যোদ্ধাদের উপর। বিনয় আমার ময়দানে নামিয়েছেন তরুণ তুর্কিদের। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেও মোর্চার দুই পক্ষকে সমর্থন নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সবমিলিয়ে পাহাড়ের ভোটাররাও বেশ দ্বিধাবিভক্ত এবারের নির্বাচনকে ঘিরে। আর এই ফাঁকে ভোট বাক্সে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। গুরুং পাশে না থাকায় পদ্ম এবার পাহাড়ে জোট বেধেছে জিএনএলএফের সঙ্গে। তবে পাহাড়ের একটি আসনেও তাঁদের প্রার্থী নেই। তিনটিতেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। পাহাড়ে যদি কোনও ভোট কাটাকুটির খেলা হয়, তবে আখেড়ে বিজেপিরই লাভ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ২ মে।