স্লোগানই সুর বাঁধে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। নির্বাচনের আগেই তাই কোনও রাজনৈতিক দলের বিশেষ স্লোগান ভোট–বাজারে আসাটাই কাম্য। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি–তে গিয়ে শুভেন্দু স্লোগান বেঁধে দিয়েছেন— ‘হরে কৃষ্ণ হরে হরে, বিজেপি ঘরে ঘরে’। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গিয়েছে, ‘চলো পাল্টাই’। তাই ভোটের ভরা মরশুমে আর দেরি না করে নিজেদের স্লোগান সামনে আনল শাসকদল তৃণমূল। এক লাইনের স্লোগান ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’–তে সুর বাঁধল ঘাসফুল শিবির। টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে হ্যাশট্যাগ #BanglaNijerMeyekeiChay.
সেখানে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং সুখেন্দুশেখর রায়। নতুন স্লোগানের ব্যাপারে এদিন সুব্রত বক্সী বলেন, ‘আমাদের কর্মী এতদিনে গোটা রাজ্য ঘুরে বুঝতে পেরেছেন যে বামলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সম্প্রীতি যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরে রেখেছেন, রক্ষা করে চলেছেন তা অন্য কেউ করতে পারবে না। তাই ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলার সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যাব।’
সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘এই স্লোগান সাধারণ মানুষের স্লোগান। ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’— গত ১০ বছরে পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পের যে উন্নয়ন রাজ্যে হয়েছে তা আমরা ধরিয়ে দিয়েছি এই চারটি শব্দের মধ্যে।’ এর আগে ‘হয় এ বার নয়, নেভার’, ‘বদলা নয়, বদল চাই’–এর মতো স্লোগানগুলি ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে নতুন এই স্লোগান তাঁর দেওয়া নয়, এর নেপথ্যে রয়েছেন তৃণমূল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকে। এর আগে তাঁর তৈরি ‘দিদিকে বলো’ এবং ‘বাংলার গর্ব মমতা’ও জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিল।
তবে এবারের স্লোগানে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘দিদি’, ‘মমতা’ সম্বোধন নয়, একেবারে ‘মেয়ে’র জায়গা দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলার মেয়ে’— যেন মা–মাটি–মানুষের আপন কেউ। বাংলার মানুষের কাছে আরও পৌঁছে যেতেই এমন স্লোগান তা বোঝাই যাচ্ছে। এভাবে বাংলার মানুষ, বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতিকেই হাতিয়ার করল তৃণমূল। দলের নতুন স্লোগানেও সেই ভাবনারই চিহ্ন স্পষ্ট। এ বারের ভোটে মমতা প্রার্থী হচ্ছেন ‘বাংলার নিজের মেয়ে’ হিসেবে।
উল্লেখ্য, বিজেপি জিতলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবে বা গেরুয়া শিবিরের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে?— এমন গোছের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে গিয়েছেন যে বাংলার ভূমিপুত্রই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার একটি সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ আবার বলেছেন, ‘বাংলায় জন্ম–পড়াশোনা, এমন ভূমিপুত্রকেই মুখ্যমন্ত্রী করবে বিজেপি।’ তাই কি এবার বিজেপি–র ‘বাংলার ভূমিপুত্র’–র পাল্টা তৃণমূলের ‘বাংলার নিজের মেয়ে’? অনেকের মনেই উঠেছে এই প্রশ্ন। ‘বাংলার ভূমিপুত্র’ বনাম ‘বাংলার মেয়ে’— ফলাফল কী হবে সেটাই দেখার।