রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সতর্কে কান দেননি মুখ্যমন্ত্রী। এভাবেই আফসোসের কথা জানালেন অভিষেক। নারদকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন তিনি বলে রবিবার কুলতলির সভায় দাবি করলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলাম, যারা পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন, তাঁদের পিছনের সারিতে রাখা হোক। আমি যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলাম, তখন যদি তিনি বিচার করতেন। তাহলে এদের জায়গা শ্রীঘরে হত। বিজেপিতে নয়।’
কিন্তু দলে সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। সেই বিষয়ে অভিষেক বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদারতা। বদলা নয়, বদল চাই। এই নীতির জন্যই আজ এদের মুখে এত বড় বড় কথা। আমি বলে যাচ্ছি, আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা হবে।’ অর্থাৎ ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হ্যাট্রিক করে ক্ষমতায় এলে এই দলবদল করা 'দুর্নীতিবাজদের' বুঝে নেওয়া হবে বলেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রকাশ্যে আসে নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো ফুটেজ। যেখানে একঝাঁক নেতাকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা যায়। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার সদস্য ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারীদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। এছাড়াও তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দারের টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। টাকা নিতে না দেখা গেলেও ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মুকুল রায় ও ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পন্ডাকেও। টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল পুলিশকর্তা এসএমএইচ মির্জাকেও। এখন মুকুল ও শঙ্কু বিজেপিতে। জেলে রয়েছেন পুলিশকর্তা মির্জা।
তখন মুখ্যমন্ত্রী বউবাজারের জনসভায় বলেছিলেন, ‘আগে জানা থাকলে ওঁদের টিকিট দিতাম না।’ কিন্তু ২১১টি আসনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। তখন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েই কথাবার্তা হয়েছিল মমতা–অভিষেকের। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দলের ভাবমুর্তি স্বচ্ছ রাখতে নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তদের মন্ত্রিসভায় রাখার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে খবর। যদিও শোভন, শুভেন্দু, সুব্রত, ফিরহাদদের মন্ত্রিসভায় নেন মমতা। এই সিদ্ধান্তের জেরে শেষপর্যন্ত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসেননি অভিষেক।
রবিবার শোভনকে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, ‘তিন বছর পর একজনের ঘুম ভেঙেছে। এখানে দুটো সভা করে বলছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি জিতিয়েছি। সে মাঠে নেমেছিল বলে আমি ৭০,০০০ ভোটে জিতেছিলাম। আর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখে জিতেছি। তিন বছর ঘুমাচ্ছিল। আপনি যত মাঠে নামবেন আমার মঙ্গল। আপনাকে মানুষ যত দেখবে, ততই তৃণমূলের ভোট বাড়বে। সে তো আবার তোয়ালে মুড়ি দিয়ে টাকা নিচ্ছিল। একহাতে সিগারেট, আরেক হাতে তোয়ালে। আরে আগে নিজে ঠিক কর কোথায় দাঁড়াবে। হারানোর দায়িত্ব আমার।’