কয়লা ও গরু পাচারে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি তথা লালার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে সিবিআই। তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তর পথে এগিয়ে তাঁর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়ান্দারা। ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে লালার ২৫টি ডায়েরি–সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। আর তাতে রয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু পুলিশ আধিকারিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম।
লালার এই ‘প্রভাবশালী’দের মধ্যে কি রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও? একের পর এক সভায় সোজাসাপ্টা না বললেও এই ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এবার রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ–সহ মাঠে নামলেন তিনি। সোমবার তমলুকের সভায় প্রায় রণং দেহি ভঙ্গিমায় অভিষেককেই আক্রমণ করছিলেন শুভেন্দু। তখনই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ম্যাডাম নারোলাটা কে? লালার টাকা কার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে?’
লালার টাকা থাইল্যান্ডের কোন ব্যাঙ্কের কোন শাখায় ঢুকেছে সেই তথ্য সামনে আনেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর দাবি, ‘থাইল্যান্ডের কাসিকর্ন ব্যাঙ্কের (Kasikorn Bank) সিয়াম প্যারাগন (Siam Paragon) শাখায় প্রত্যেক মাসে ৩৬ লক্ষ টাকা করে ঢুকেছে। রসিদটাও আছে আমার কাছে।’
শুভেন্দুর অভিযোগ, অভিষেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা তথা ‘এমবিএ’ ডিগ্রি ভুয়ো। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘এরকম চিটিংবাজ খুব কম আছে। ছোট বয়স থেকে হাত পাকিয়েছে কী করে চিটিংবাজি করতে হয়। এখন কিন্তু আর ‘এমবিএ’ লেখেন না তিনি। প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছিলেন, দিল্লিতে এমন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখান থেকে তোলাবাজ ভাইপো ‘এমবিএ’ পেয়েছে। তিনি তাই ‘এমবিএ’ লেখেন না। চিটিংবাজি শুরু ছোট বয়স থেকে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘আর ভাইপোকে যে আদরের দুলাল করেছেন তিনিও ‘ডক্টরেট’ লেখেন না আর।’
বিজেপি–তে যোগ দেওয়ার পর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলেই সম্বোধন করে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পর এক–একটা সভায় একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তাঁরা। এক সভায় অভিষেকের আক্রমণের জবাব আর এক সভায় দিচ্ছেন শুভেন্দু। আবার শুভেন্দুর কটাক্ষের জবাব তার পরের সভায় দিচ্ছেন অভিষেক। সেই একই সূত্র মেনে সোমবার তমলুকের সভায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দুর কথায়, ‘ট্রাকের খালাসি, ট্রাকের চালক, কয়লা খাদান, বালি খাদান, গরু পাচার— সব জায়গায় তোলাবাজ ভাইপোর নাম সবার মুখে মুখে ঘোরে। বক্তব্য রাখতে রাখতে কেঁপে যাচ্ছে ভাইপো। এত ভয় কীসের?’ শুভেন্দুর প্রশ্ন, ‘আচ্ছা মাননীয় তোলাবাজ, সব তো বলছেন, বিনয় মিশ্র বলছেন না কেন? বিনয় মিশ্র কে?’
শুভেন্দুর দাবি, গত ২ ডিসেম্বর শ্যামবাজারে তাঁর হাত–পা ধরেছিলেন অভিষেক। রবিবার কুলতলির সভায় শুভেন্দুকে তুই–তুকারি করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু এদিন মমতা ও অভিষেককে আক্রমণ করে বলেন, ‘ওর থেকে আমি ১৮ বছরের বড়। ভাষা শুনেছেন? অসুবিধা কিছু নেই। কারণ, ঝাড়ে তো একই বাঁশ হবে। একটা ঝাড়ে আলাদা বাঁশ হয় না। মাননীয়া যদি মেদিনীপুরে মোদিজিকে তুই–তাকারি করেন। সেই ঝাড়ের বাঁশ আর কী করবে?’