একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে সংযুক্ত মোর্চার। বেশিরভাগ আসনেই তারা পিছিয়ে থাকে সকাল থেকে। বেলা বাড়তেই জানা যায় তাদের ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, বাম–কংগ্রেস, আইএসএফ জোট সত্ত্বেও কেন এই ভরাডুবি? তাছাড়া এদের ভোটব্যাঙ্ক কোথায় ট্রান্সফার হল? মানুষ তা জানতে চায়। এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘দেখে নিন, দেখে যা খুশি লিখে দিন। হেরে গেছি আমরা।’ আসলে তিনি সবই বুঝতে পেরেছেন কিন্তু বলতে চাননি।
বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের প্রথমসারির কয়েকজন নেতার দাবি, ‘আমাদের ভোট এবার সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসে ট্রান্সফার হয়েছে। যা কার্যত মেনে নেওয়া যায় না। এমন ভরাডুবি হবে কল্পনাও করিনি। ভেতরে ভেতরে এমন খেলা হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। নীচুস্তরে এই সমীকরণ আমরা ধরতে পারিনি। আমরা আমাদের কমিটেড ভোট পাইনি। ফলে এই ফলাফল হয়েছে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে।’
সূত্রের খবর, বাম–কংগ্রেস জোট করে লড়াই করলেন ভোট ভাগ হয়ে যেত না। এমনকী ভোট ট্রান্সফার হতো না। যেহেতু আইএসএফ–কে জোটে নেওয়া হয়েছে তাই অনেক বামপন্থী নেতা–কর্মী–সমর্থক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকী তাঁরা সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। যার ফলে রাজ্য–রাজনীতিতে সেভাবে খাতা খুলতে পারেনি সংযুক্ত মোর্চা। এই ভোট ট্রান্সফার করার কারণ জোটে আইএসএফ–কে নিয়ে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করা। যা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। দলকে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি।
আবার দফায় দফায় বৈঠকের পরেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল আইএসএফ–এর। যা ভোটে ভাঙন ধরিয়ে দেয়। জোটের জটিলতা কাটিয়ে ভোট টানতে এবার টুম্পা, উরি বাবা–র মতো প্যারোডিও ব্যবহার করেছিল বামেরা। কিন্তু তাতেও অস্তিত্ব রক্ষা করা গেল না। তবে ইতিমধ্যেই ভাঙড় থেকে জয়ী হয়েছেন নওসাদ সিদ্দিকি। বিজেপি ঠেকাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসই। এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল অনেকের মধ্যে। যার জন্য ভোট তৃণমূল কংগ্রেসে গিয়ে পড়েছে। বিজেপিকে রুখে ফের বাংলার কুর্সি দখল করলে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা। এবার বামেরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে ভোটগুলি তৃণমূল কংগ্রেসকে দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবেদনেই যেন সাড়া দেওয়া হল।