বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বাংলা জুড়ে ‘পরিবর্তন যাত্রা’র তথা রথযাত্রার সূচনা করেছে বিজেপি। আর তাতে অংশ নিতে ইতিমধ্যে বাংলায় এসেছেন জে পি নড্ডা। আসবেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, স্মৃতি ইরানি, যোগি আদিত্যনাথের মতো তাবড় তাবড় বিজেপি নেতারা। আর এই রথাযাত্রাকে ঘিরেই বুধবার রায়গঞ্জের জনসভা থেকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশ্ন, ‘বিজেপি–র নেতারা কেন রথে থাকবে? তারা কি জগন্নাথ–বলরাম–সুভদ্রার থেকেও বড়? তা হলে কি বিজেপি নেতাদের এখন আমাদের পুজো করতে হবে?’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ১০ স্টার হোটেলে গেলে যা সব পাওয়া যায় তা রাখা রয়েছে বিজেপি–র ওই ‘পরিবর্তন যাত্রা’র রথে। তিনি এদিন কটাক্ষ করে বলেন, ‘রথ বের করেছেন বাবুরা। সেই রথে বিরিয়ানি, মাংস–পোলাও, ছানা–কবাব দিয়ে খানাপিনা, বিশ্রাম, সাজুগুজু, গানবাজনা— সব রেডি। সেখানে নেতারা ফূর্তি করছে। জনগণের টাকায় ফূর্তি করছে। আর বলছে তারা নাকি রথযাত্রা করছে। যেভাবে এরা জগন্নাথদেবের রথযাত্রাকে কালিমালিপ্ত করেছে তা দেখে আমি লজ্জিত।’
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ‘ধর্মের নামে অর্ধম করছে এরা। দেবতার রথ বিজেপি–র রথ হতে পারে না।’ তিনি এদিন গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে আরও বলেন, ‘ধর্মকে ভালবাসতে হলে আগে মানুষকে ভালবাসতে হয়। যাঁরা মানুষ খুন করে, দাঙ্গা করে, লুঠপাট করে, যাঁরা মানুষের রক্ত নিয়ে খেলে তাঁদের মুখে কি ধর্মের কথা মানায়?’
মমতার কথায়, ‘আমরা সবাই জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় যাই। আমি নিজে রথ টানি। রথের মধ্যে থাকে জগন্নাথ–বলরাম–সুভদ্রার মূর্তি। আমরা দেখেছি দেব–দেবতারা রথ চড়ে। কিন্তু এখন তো দেখছি দেব–দেবতারা রথে বসছেন না। পাঁচতারা হোটেল সমান রথ তৈরি করে, তার মধ্যে সমস্ত ভোগ করবার জিনিস রেখে রথযাত্রার নামে নানারকম যাত্রা করে বেরোচ্ছে। আর বলছে আমরা রথযাত্রা করছি।’
এদিকে, এই বক্তব্য রাখার সময় মঞ্চের একেবারে সামনে থাকা সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের ওপর গিয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ। ‘যদি জগন্নাথ–বলরাম–সুভদ্রার রথযাত্রা হয়, আমার কোনও আপত্তি নেই, আমি ভাল করে তা করব। যদি শ্রীকৃষ্ণ–অর্জুনের রথযাত্রা হয়....’— এই বক্তব্য রাখার সময়ই হঠাৎ থমকে যান মমতা। ক্ষুব্ধ মমতা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রেসের যাঁরা আছেন দয়া করে মিটিংয়ে সমস্যা তৈরি করবেন না। কেন মিটিংগুলোকে ডিস্টার্ব করেন? আপনারা আমাদের বন্ধু।’
মমতা তোপ দেগে বলেন, ‘একজন–দু’জন ইধার–উধার করে। তারা এটা করার জন্যই আসে।’ দাবি জানাতে হেমতাবাদের সভামঞ্চের দু’পাশ দিয়ে দু’বোন চলে আসার ঘটনার কথা মনে করান মুখ্যমন্ত্রী। পরে মমতা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘দেখলেন, যেই রথের কথা বললাম, ওমনি দৃষ্টিটা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।’ ফের বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তিনি।