পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকটাই নিশ্চিন্ত দেখাল। ভোট চলাকালীন যেসব হিংসার অভিযোগ আসছিল চারদিক থেকে সেসব নিয়ে কোনও মন্তব্যই করলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো। বরং তাঁর গলায় ফের শোনা গেল, খেলা হবে তো? আর তারপরই মঞ্চ থেকে খেললেন। দেখা গেল, এক গৃহবধূকে ফুটবল ছুঁড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ক্যাচ লুফতেই তৃণমূলনেত্রীর চিৎকার, ‘বিজেপি বোল্ড আউট। খেলতে আমিও ভালো পারি। এক পায়ে এমন শট দেবো, কান মুলে বের করে দেবো রাজনীতির মাঠের বাইরে। আপনাদেরও তা করতে হবে।’
এই ঘটনার পাল্টা জবাব এল কাঁথি থেকে। এদিন বেলা গড়াতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন কাঁথির শান্তিকুঞ্জের গৃহকর্তা তথা সদ্য তৃণমূল কংগ্রেস দলবদলু বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা শিশির অধিকারী। তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোল খেয়ে গিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, এবারের ভোটে মমতা বনাম শুভেন্দুর সম্মুখসমর নিয়ে সরগরম রাজ্য–রাজনীতি। অধিকারী পরিবারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন নারায়ণগড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সভা করছেন তখন পূর্ব মেদিনীপুরে জোর কদমে ভোটগ্রহণ চলছে। এখান থেকেই তিনি নাম না করে শিশির–শুভেন্দুকে তুলোধনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই গদ্দার ছিল। বাপ আর ব্যাটা। এখন বিজেপিতে গিয়ে জ্যাঠা হয়েছে। ওদের সম্পর্কের যত বলি তত আমার ঘৃণা হয়। কেন বলুন তো? আসলে লজ্জাটা আমার, আমি তো এত বাড়িয়েছি। আমি এত দিয়েছি। যা চেয়েছি তাই দিয়েছি। ভাগ্যিস আপনারা ওই বাপ ব্যাটার সঙ্গে নেই। দিল্লিতে গিয়েই অফিসারদের ম্যানেজ করে।’ এই বাপ–ব্যাটা কে তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।
এই কথা শোনার পরই নিজের বাড়িতে শিশির অধিকারী বলেন, ‘২০১১ সালে যখন বামফ্রন্ট হেরে যাচ্ছে। ভোটের পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত আমাকে বলেছিলেন, বামেরা ২৫৫ আসনে জিতবে। আমি তাঁর পাশে বসে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ফোনে বলেছিলাম, সিপিআইএম গোল খেয়ে গিয়েছে। আজ বলছি, দিদিমণি গোল খেয়ে গিয়েছে।’ সুতরাং নারায়ণগড় বনাম কাঁথির খেলা জমে গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নন্দীগ্রাম থেকে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাই এখানকার সমীকরণ তাঁর জানা। রাজনীতির ময়দানে এটা তাঁর চেনা মাঠ। সেখানে আজ তিনি বলেন, ‘একটা পরিবার হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, কন্টাই ব্যাঙ্ক, কন্টাই মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান, পরিবেশ মন্ত্রক, পরিবহণ মন্ত্রক কী দিইনি! আজ নির্বাচনের আগে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পালিয়েছে। এখন অমিত শাহকে দিয়ে আমায় ভয় দেখাচ্ছে।’ আর নন্দীগ্রামের লড়াই নিয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে বাংলার মেয়ে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বাংলার বিশ্বাসঘাতককে হারাবেন।’