২০০০ সালের হৃতিক রোশনের ব্লকবাস্টার ছবি ‘কহো না—প্যায়ার হ্যায়’ তে প্লেব্যাক গেয়ে রাতারাতি বলিউডের তাবড় সংগীত শিল্পীদের পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। প্রথম ছবিতেই বাবুলের গানের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা, হৃতিক রোশনের মতো রাতারাতি বলিউডের তারকা করে তুলেছিল তাঁকে। বহিরাগত হলেও তাঁকে কেউ টলাতে পারেনি বলিউডের আসন থেকে। দীর্ধ দু’দশক ধরে বলিউডের সুর-সাম্রাজ্য একচ্ছত্র শাসন করার পরই এই নক্ষত্র প্রবেশ করেছিলেন রাজনীতিতে। সেখানেও ছাপ রেখেছেন এই বলিউডের তারকা। আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তাঁর ‘বড়াল’ পদবি। উত্তরপাড়ার সু্প্রিয় এখন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জের বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র টিকিটে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবারে নির্বাচন কমিশনে নিজের পেশ করা হলফনামা কি জানিয়েছেন বাবুল, আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় বাবুল তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তাঁর উপার্জন ১৩,৩২,৯৪০ টাকা। তার আগের আর্থিক বর্ষে এই অঙ্ক ছিল ১১,৯২,১৮০ টাকা। তাঁর স্ত্রী রচনা শর্মা সুপ্রিয় বিমানসেবিকা ছিলেন। দুই মেয়ে শর্মিলি ও নয়না তাঁর উপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন গায়ক-সাংসদ।
বর্তমানে বাবুলের হাতে রয়েছে ৫১ হাজার টাকা। স্ত্রীর হাতে আছে নগদ ৩৭ হাজার টাকা। বাবুলের বড় মেয়ে শর্মিলীর হাতেও ১৪ হাজার টাকা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এসবিআই ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের দু’টি অ্যাকাউন্টে বাবুলের নামে স্থায়ী আমানত আছে যথাক্রমে ২,১৩,৭৪০ টাকা ও ২,৩০,১০১ টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের আরও একটি অ্যাকাউন্টে তাঁর নামে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ২,১৫,৬৬৮ টাকা রয়েছে।
এ ছাড়াও চারটি ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে তাঁর নামে আছে যথাক্রমে ১৩,২৪১ টাকা, ২,৭৮,৮৫০ টাকা, ৭,১৫৯ টাকা ও ৩৫,৭৬৮ টাকা রয়েছে।
মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ করেছেন বাবুল। মিউচুয়াল ফান্ডে তিনটি ক্ষেত্রে তাঁর বিনিয়োগ যথাক্রমে ৯৮,৭৩৯ টাকা, ২২,৬৬৬ টাকা, ১,০৬,৭২৬ টাকা, ১,০৮,৯৭৯ টাকা ও ৩,১৪,৬৭৬ টাকা।
অন্য দিকে, শেয়ারবাজারেও তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ কম নয়। ৮টি সংস্থায় তাঁর বিনিয়োগ ছাপিয়ে গিয়েছে লক্ষাধিক টাকা। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে আছে ৩,৩২,৪৭৪ টাকা। এছাড়ও বেশ কয়েক লক্ষ টাকা একাধিক জীবনবিমায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন।
পেশ করা হলফনামায় তিনি ৪টি গাড়ির কথাও উল্লেখ করেছেন। সেগুলির মধ্যে অডি কিউ ফাইভ তিনি কিনেছিলেন ৫০,৬৯,৩২১ টাকায়। শেভ্রোলে বিট-এর দাম পড়েছিল ৪,৯৬,২৭৮ টাকা। হুন্ডাই আই ২০ কিনেছিলেন ১০,৭৭,০০৫ টাকায়। এছাড়াও বাবুলের ঝুলিতে রয়েছে রয়্যাল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড মোটরবাইকও। তার দাম ১,৫৭,০০০ টাকা। তিনি উল্লেখ করেছেন, এ বছর সেকেন্ড হ্যান্ডে কেনা মারুতি সুইফ্ট-এর কথাও। সেটার দাম পড়েছিল ৭৫,০০০ টাকা।
বাবুলের মালিকানায় থাকা ২০০ গ্রাম সোনার গয়নার দাম ৮,০৯০,০০০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর ৩০০ গ্রাম সোনার গয়নার দাম ১৩ লক্ষ টাকা।
কৃষিজমি না—থাকলেও বাবুল হলফনামায় জানিয়েছেন, ভিনরাজ্য তার জমি রয়েছে। উত্তরাখণ্ডে ২৭০০ বর্গফুট আয়তনের তাঁর একটি জমি আছে। ২০১৭ সালে জমিটি কেনার সময় বাজারদর ছিল ১৮ লক্ষ টাকা। জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য ১৯ লক্ষ টাকা বলে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি হাওড়ায় দু’টি, আসানসোলে একটি ও মুম্বইয়ের লোখণ্ডওয়ালায় একটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছেন বাবুল। সেগুলির মধ্যে হাওড়ার একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা যৌথ ভাবে বাবুল ও তাঁর স্ত্রী রচনার। কলকাতার মুকুন্দপুরে তাঁর স্ত্রী রচনার আরও একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে সেটির মালিকানা যৌথ ভাবে তাঁর স্ত্রী রচনা ও শাশুড়ি শুভার। এছাড়াও বাবুলের নামে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে ৩টি গৃহঋণ চলছে। তার মধ্যে প্রথম ঋণের পরিমাণ ৫৫,৭৪,১০০ টাকা। দ্বিতীয় ঋণ ২৮,৯০,১৪৯ টাকার ও তৃতীয় ঋণ তিনি নিয়েছেন ২,১৬,৮৩৯ টাকার।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক বাবুল রাজনীতিকেই নিজের পেশা বলে উল্লেখ করেছেন। শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তনী বাবুল ১৯৯১ সালে স্নাতক হন। তাঁর স্ত্রী রচনা গৃহবধূ।
২০১৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও নরেন্দ্র মোদীর অনুরাগী বাবুল বিজেপি-তে যোগ দেন। প্রথম লড়াইয়েই আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারিয়ে লোকসভায় পা রাখেন বাবুল। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে একই কেন্দ্র থেকে হারিয়ে দেন তৃণমূলের মুনমুন সেনকেও।
গত ৭ বছর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন বাবুল। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে পদ্মশিবিরের অন্যতম হাতিযার তিনিই।