রোহন কিশোর এবং অভিষেক ঝা
এবারই কি বাংলার নির্বাচনে সবথেকে মেরুকরণের অঙ্ক কাজ করবে? নির্বাচনের আগে থেকেই সেই হিসাব-নিকেশ চলছে। কিন্তু তথ্য বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট যে নিঃসন্দেহে এবার বাংলার ভোটযুদ্ধে মেরুকরণ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল। কিন্তু বাংলার ভোট-ইতিহাসে এবার মেরুকরণের প্রভাব সবথেকে বেশি ছিল না।
একটি স্বীকৃত গাণিতিক প্রক্রিয়ায় তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ দেখেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সব বিধানসভা নির্বাচনেই মেরুকরণের প্রভাব আরও বেশি ছিল। তবে এবার মেরুকরণের প্রভাব যে খুব কম পড়েছে, তা একেবারেই বলা যাবে না। ২০১৬ সালের থেকে এবারের ভোটে মেরুকরণের প্রভাব কিছুটা বেশি ছিল। একটা সহজ অঙ্কেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এবার নন্দীগ্রাম আসন থেকে হেরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে আসনে মুসলিম ভোটার ছিলেন প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ। সেখানে ৪৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। মমতার ঝুলিতে গিয়েছে ৪৭.৬ শতাংশ ভোট। সেখানে ২০১৬ সালে ৬৭.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন শুভেন্দু। যিনি সেই সময় তৃণমূলে ছিলেন। ফলে একটা বিষয় যে স্পষ্ট যে নন্দীগ্রামের ভোটে মেরুকরণের প্রভাব ভালোমতো পড়েছে। নন্দীগ্রামের রাউন্ডভিত্তিক বিশ্লেষণেও সেই প্রমাণ মিলবে। ১৭ টির মধ্যে মাত্র পাঁচটি রাউন্ডে জিতেছেন মমতা। অর্থাৎ নন্দীগ্রামের দুই ব্লকে যে প্রবল মেরুকরণ হয়েছে, তা ইভিএমের গণনায় স্পষ্ট।
যদিও সেই মেরুকরণের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেই ২১৩ টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সঙ্গে করেছে বাংলার মসনদ দখলের হ্যাটট্রিক। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের যে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে, তার বেশিরভাগ নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে তৃণমূল। ভোট-কাটাকুটির অঙ্ক কাজই করেনি। ২০১৬ সালে এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ন'টি জেলায় এবার তৃণমূলের ভোটের হার কমেছে। বেড়েছে ১০ টি জেলায়। তার মধ্যে আছে রাজ্যের তিন সর্বাধিক মুসলিম-অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে। তিন জেলায় তৃণমূলের ভোটের হার ৪.২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৪ শতাংশ। তা থেকে স্পষ্ট যে বিজেপিকে রুখতে এককাট্টা হয়েছেন অধিকাংশ মুসলিম। তাতেই তৃণমূলের ভোটও বেড়েছে। সেটা যদি মুদ্রার একপিঠ হয়, তাহলে অপর পিঠ অবশ্যই হল যে কয়েকটি হিন্দু-অধ্যুষিত জেলায় পিছিয়ে থাকলেও তৃণমূল কম ধাক্কা খেয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন সরকারের মতে, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প, মহিলা ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তার কারণেই সেই ধাক্কাটা প্রাবল্য বেশি হয়নি। স্রেফ মেরুকরণের ভিত্তিতে ভোট এলে তা অসম্ভব ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের।