একের পর এক জেলায় আশাতীত ভালো ফল করছে তৃণমূল। কিন্তু রাজ্যের প্রান্তিক জেলা কোচবিহারে গিয়ে সেই বিজয় রথ কোথাও যেন ধাক্কা খেল। গোটা বাংলার নজর ছিল কোচবিহারের দিকে। একদিকে এই জেলারই নাটাবাড়িতে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দিকে নজর ছিল বাংলার। অন্যদিকে ভোটের দিন শীতলকুচিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছিল বাহিনীর গুলিতে। এর জেরেও নজর ছিল শীতলকুচি আসনের দিকে। রাত পর্যন্ত ভোটের ফলাফলের যে ট্রেন্ড তাতে ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শেষ পর্যন্ত বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ৬টি আসন। নাটাবাড়ি কেন্দ্রে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর প্রতিদ্বন্দী বিজেপি প্রার্থী তথা তাঁর একসময়ের সহকর্মী মিহির গোস্বামীর থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। তাঁর হারের সম্ভাবনা প্রবল। এদিকে ভোটের রাউন্ড যত এগিয়েছে ততই উত্তেজনার পারদ চড়েছে নাটাবাড়িতে। একসময় বিজেপি প্রার্থী মিহির গোস্বামীর গাড়িতেও ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
অন্যদিকে শীতলকুচিতে তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতীম রায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থীর তুলনায়। তবে সিতাই ও মেখলিগঞ্জে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এর সঙ্গেই এবার অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র ছিল দিনহাটা কেন্দ্র। উদয়ন গুহ বনাম নিশীথ প্রামাণিকের লড়াই। তবে শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের তুলনায় শেষ পর্বের রাউন্ডগুলিতে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল প্রার্থী। এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এদিন সন্ধ্যায় দিনহাটায় দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়।
এবার একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। গত বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার উত্তর আসনটি ছাড়া সবকটি আসনই তৃণমূলের দখলে ছিল। কোচবিহার উত্তর আসনটি ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। এবার সেখানেও বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ জুড়ে গেরুয়া সুনামি দেখেছিলেন বাসিন্দারা।সেবার কোচবিহার আসনটি গিয়েছিল বিজেপির দখলে। সেই ধারা কিছুটা হলেও অব্যাহত কোচবিহারে। কিন্ত প্রশ্ন উঠছে কেন তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন বাসিন্দারা ?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত কয়েকবছরে দলীয় দ্বন্দ্বের জেরে আরও জীর্ণ হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সেই জায়গায় ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি করেছে বিজেপি। গ্রামে গ্রামে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। সেই বিষয়টিও ভালোভাবে নেননি সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে রাজবংশী তথা গ্রেটারের ভোট ব্যাংকের একটা বড় অংশ মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূলের দিক থেকে। সব মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ইভিএমে।তার জেরেই একদা ফরওয়ার্ড ব্লকের দুর্গে এবার কার্যত পদ্মফুলের ছড়াছড়ি।