বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝটিকা পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে এদিন অনুন্নয়ন, বেকারত্ব ও কাটমানি ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলা। এদিন ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তোষণের রাজনীতির অভিযোগ করেন তিনি। এক নজরে এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।
১. আজ রেল এবং মেট্রোর বহু প্রকল্পের শিল্যান্যাস এবং বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আমি বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভ কামনা দিতে চাই।
২. বিশ্বের যেসব দেশ দারিদ্র দূরীকরণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, তারা সময় থাকতে পরিকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ অনেক আগে করা উচিত ছিল। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
৩. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও একই কাজ হচ্ছে। রেলপথ সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎবণ্টন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফ্রেট করিডর থেকে অনেক সুবিধা পাবে পশ্চিমবঙ্গ। নতুন বাণিজ্য ও সম্ভাবনার দিক খুলে যাবে।
৪. কিসান ট্রেনের সুবিধা ছোট কৃষকরাও পাচ্ছেন। ফল, সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি দেশের বড় বড় বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে।
৫. হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলির জন্য আজ অনেক বড় দিন। মেট্রোর নতুন পথে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। কলকাতা যাওয়ার জন্য আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে এখন থেকে।
৬. ঋষি অরবিন্দ, মতিলাল রায়, রাসবিহারী বোস, কানাইলাল দত্তের মত মানুষ এখানে জন্মেছেন। এই মাটিতেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জন্মেছেন। বহু মনীষী এই মাটিতেই জন্মেছেন। কিন্তু এখানে পরিকাঠামোর বেহাল দশা। বঙ্কিমচন্দ্রের ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। সেই বঙ্কিমভবন যেখানে বন্দেমাতরম রচিত হয়েছিল। যাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বিপ্লবীরা।
৭. পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অনেক অন্যায় হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে ভোটব্যাংকের রাজনীতি। এই রাজনীতি বাংলায় মানুষকে দুর্গা পূজা করায় বাধা দেয়। এই সব লোকেদের কখনো ক্ষমা করা হবে না। আজ আমি বাংলার মানুষকে আশ্বাস দিতে চাই বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করবেন। কেউ ভয় দেখাবে না। বিজেপি সোনার বাংলা তৈরির জন্য কাজ করবে। এখানে সংস্কৃতি মজবুত হবে। সব কিছুর সম্মান পাবে। সবার উন্নয়ন হবে। তুষ্টিকরণ হবে না। তোলাবাজি মুক্ত বাংলা হবে।
৮. স্বাধীনতার আগে বাংলা অন্য রাজ্য থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরে যাঁরা বাংলায় শাসন করেছেন তাঁরা বাংলার এই হাল বানিয়েছেন। মা মাটি মানুষ বলে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করেছেন।
৯. গ্রামে গ্রামে প্রকল্পের টাকা পৌঁছায় না। তোলাবাজি হয়। তাই তৃণমূলের নেতাদের সম্পদ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ গরিব হয়েছে।
১০. এখানে কৃষক সম্মান নিধির টাকা পায়না মানুষ। আয়ুষ্মান ভারতের টাকা থেকে আজও বঞ্চিত বাংলার মানুষ।
১১. বাংলার ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জল জীবন মিশন চালু হয়েছে। বাংলার জন্য এই প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেড় - পৌনে দু’ কোটি পরিবারের মধ্যে মাত্র দু’লক্ষ বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে। এই প্রকল্পে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ বাড়িতে পাইপে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য টাকা পাঠানো হয়েথিল। কেন্দ্র সরকার চাপ দেওয়ার পরে মাত্র ৯ লক্ষ বাড়িতে এই সুবিধা পৌঁছেছে। এর থেকেই স্পষ্ট তৃণমূল সরকার কতটা উদাসীন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পরিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়ার অধিকার আছে কি নেই? কিন্তু সব বাড়িতে জল পৌঁছানোর জন্য কেন্দ্র ১৭০০ কোটি টাকার বেশি টাকা তৃণমূল সরকারকে দিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৬০৯ কোটি টাকা তৃণমূল খরচ করেছে। বাকি টাকা কারচুপি করেছে। এতেই প্রমাণ হয় তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের জন্য সহানুভূতি নেই।
১২. পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গড়তে হবে আসল পরিবর্তনের জন্য। যে স্বপ্ন আজকের যুবসমাজ দেখছে।
১৩. বিগত কিছু বছরের অব্যবস্থা কি হাল করেছে রাজ্যের। হুগলি নদীর দুপাশে পাট ও ইস্পাতের কারখানা ছিল। কিন্তু আজ কি হাল তা আপনারা দেখছেন।
১৪. কলকাতা এখন বদলে গেছে। বাংলার মানুষকে এখন কাজ করার জন্য অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী এখানকার সরকার। বিজেপি সরকার তৈরি হলেই সব ঠিক করবে। উন্নয়ন হবে।
১৫. একটা সময় ছিল যখন পশ্চিমবঙ্গের পাট গোটা দেশে পৌঁছে যেত। এর সঙ্গে পাট চাষীদের রোজগার জড়িয়ে ছিল। বিজেপি সরকার কেন্দ্রে এসে পাট নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেছে।
১৬. হুগলির আলু চাষী, ধান চাষীদের লুটেছে তৃনমূল। যতদিন না প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠছে, ফসল বিক্রি করার স্বাধীনতা পাচ্ছে এই অবস্থা পরিবর্তন হবে না।
১৭. এর জন্য দায়ী সিন্ডিকেট, কাটমানি। ভাড়া বাড়ি নিতে হলেও কাটমানি দিতে হয়। এই ধারনা, এই পরিস্থিতির বদল চাই।
১৮. যতদিন এখানে সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি, কাটমানি, শাসন প্রশাসন গুন্ডাদের আশ্রয় দেবে ততদিন এখানে উন্নয়ন হবে না।
১৯. এর বদল ঘটানোর জন্য সব জায়গায় আওয়াজ উঠছে আর নয় অন্যায়। আসল পরিবর্তন চাই।
২০. আমরা সবাই মিলে এখানে শ্রমিক, কৃষক, যুবকদের সেই সুবিধা দেব।