প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই ঘরের ভেতরেই বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। কোচবিহার থেকে সাতগাছিয়া হয়ে কলকাতা। বিদ্রোহের আঁচ পড়েছে সর্বত্রই। আর এই বিদ্রোহকে কমব্যাট করে একুশের নির্বাচনে ২০০ আসনে ঘাসফুল ফুটিয়ে তোলা একপ্রকার চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা। এবার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতার পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের জামাতা ইয়াসির হায়দর। একটি ফেসবুক পোস্ট করে তিনি দলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। আর তাতেই রাজ্য–রাজনীতি তোলপাড়।
শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় কার্যালয়ে ফিরহাদ হাকিমকে পাশে নিয়েই ২৯১টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তালিকায় দেখা যায়, দলের বহু মাটি কামড়ে পড়ে থাকা সৈনিকদের সরিয়ে রাজনীতিতে আনকোরা টলিউড তারকাদের প্রার্থী করা হয়েছে। তা নিয়ে দলের অন্দরেই জোর চর্চা শুরু হয়। তারপর তা আছড়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। যেখানে দেখা যায় ফিরহাদ–জামাতা ইয়াসিরের ক্ষোভ। তিনি লেখেন, ‘কয়েক বছর আগে একজন বুদ্ধিমান মানুষ আমাকে বলেছিলেন যে, তারকা বা বিখ্যাত হলে সহজেই টিকিট পাওয়া যায়। তখন ওঁর কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত ছিল আমার। যাঁরা বছরে ৩৬৫ দিন দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, তাঁদের উপেক্ষিতই থাকতে হয়। এটাই কঠিন বাস্তব’।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বিশ্বস্ত সৈনিক ফিরহাদ হাকিম। স্কুটারের চালক আসন থেকে দলের সংগঠন নেত্রীর ভরসা ববি। তারকা চমক থাকলেও অনেক নেতাকে প্রার্থী করতে না পারায় আক্ষেপের সুর শেনা গিয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর কণ্ঠে। কিন্তু এখন তা ক্ষোভের আকারে বেরিয়ে আসছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে স্বয়ং ববি–কে। জামাতাকে ফিরহাদ অন্যদের থেকে বেশি স্নেহ করেন। আদর করে ডাকেন ‘টাইগার’ বলে। সেই ‘টাইগার’ যে নেটমাধ্যমে ‘গর্জে উঠবেন’ তা ভাবা যায়নি। ফিরহাদ নিজে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর অভিমান করে কেঁদে ফেলেন দলের পুরনো সৈনিক সোনালী গুহ। আরাবুল, সোনালী–সহ অন্যান্যদের পর এবার বিক্ষোভ ফিরহাদ হাকিমের নিজের পরিবারেও। তবে সূত্রের খবর, এরা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ চলছে বলেও কটাক্ষ করেন ইয়াসির। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের খবর, সময়ের সঙ্গে ফিরহাদ–মমতার যতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন, ততই ঘাসফুলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ইয়াসিরের। একদা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইয়াসির। রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহ করলেন তিনি। যা নির্বাচনের মুখে দলের অস্বস্তি বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। তিনি লেখেন, ‘তারকা হলেই টিকিট, পরিশ্রমের কোনও দাম নেই।’