বুধবার আলিপুরদুয়ারের সভায় নিজের দলের প্রশংসা করে বিজেপি–কে কটাক্ষ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও মনে করি, তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ, বিধায়ক টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না।’
তাঁর কথায়, ‘কোনও নেতাকে টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে জেলা স্তর থেকে সুপারিশ করতেই পারে। কিন্তু আমরা সমীক্ষা করে রাজ্য স্তর থেকে টিকিট দিই। আমাদের টিকিট পেতে কোনও লবি করতে হয় না। যে পাঁচবছর মানুষের সঙ্গে থাকবে, ভাল কাজ করবে, সে এমনিতেই টিকিট পাবে। দল তাঁকে খুঁজে নেবে। এটা তৃণমূল কংগ্রেস।’
স্বাভাবিকভাবেই এদিন এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়ে বিরোধী বিজেপি–র প্রতি তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ তিনি এর আগেও বিজেপি–র বিরুদ্ধে ‘টাকা দিয়ে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক কেনার’ অভিযোগ তুলেছেন। উল্লেখ্য, প্রথমে শুভেন্দু অধিকারী, তার পর একে একে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন।
কিন্তু যাঁরা তৃণমূলে রয়েছেন তাঁদের প্রতি এদিন কী বার্তা দিলেন মমতা? তিনি বলেন, ‘তৃণমূলে যাঁরা থাকবেন তাঁদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে এটা মা–মাটি–মানুষের দল। এখানে লোভের জায়গা নেই। যদি কেউ ভুল করে থাকেন তবে সংশোধন করে নেবেন। তৃণমূলের আর একটা গুণ, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা কিন্তু দলের নেতা নয়। তৃণমূলের বুথকর্মীরা হচ্ছে দলের নেতা। তাঁরাই কিন্তু নেতাদের পরিচালিত করে। তাঁরাই ভোটার লিস্ট দেখেন, তাঁরাই এলাকায় কাজ করেন, মানুষের কাছে পৌঁছোন।’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন পরিষ্কার জানান তিনি বাংলায় এনআরসি হতে দেবেন না। তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরা, অসমে গিয়ে দেখুন লোকজন কত কষ্টে আছে। এনআরসি–র নামে তাঁদের ওপর কী মাত্রায় অত্যাচার হয়। আমার কাছে বাঙালি–অবাঙালির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বিহারের ভাইবোন আমাদের ভাইবোন। উত্তরপ্রদেশের ভাইবোন আমাদের ভাইবোন। সবাইকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদিবাসীদের জমি যাতে কেউ কেড়ে নিতে পারে তার জন্য আমরা আইন এনেছি। আপনারা বাংলায় অনেক ভাল আছেন।’
এদিন সভায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের কাছে মমতার প্রশ্ন, ‘বিনা পয়সায় খাদ্য, স্বাস্থ্য কে দেয়? জন্ম থেকে মৃত্যু প্রোগ্রাম কে করেছে?’ উত্তরে নিজেই বলেন, ‘মা–মাটি–মানুষের সরকার।’ ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। তাই এবার মমতা তাঁর প্রচার কর্মসূচিতে অনেকটাই জোর দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের ওপর। এদিন উত্তরবঙ্গবাসীর প্রতি মমতার বার্তা, ‘আপনারা বিনা পয়সায় খাদ্য, রেশন চান? তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন। বিনা পয়সায় স্বাস্থ্যসাথী চান ৫ লাখ টাকার? তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন। কন্যাশ্রী? রূপশ্রী? সবুজশ্রী? তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন।’
২০১৪ সালে জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার দুটি জেলা করা হয়। আর তা হয় তৃণমূলের আমলেই। সে কথা এদিন মনে করিয়ে দেন মমতা। একইসঙ্গে তিনি ডুয়ার্সকন্যা, আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজবংশী অ্যাকাডেমি, কামতাপুরী অ্যাকাডেমি, তরাই–ডুয়ার্স উন্নয়ন বোর্ড, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড, লেপচা উন্নয়ন বোর্ড, উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা, সাফারি পার্ক— এ সবের কথা তুলে ধরে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা বলেন।