ও ঠিক ততটাই সরল যতটা কোয়ান্টাম ফিজিক্স। ও একজন ক্রেজি জিনিয়াস।ও আসলে তোমাদের নাগালের বাইরে,ব্রেস্ট ফ্রেন্ডের মৃত্যুর পর বলিউডের প্রতি এভাবেই তোপ দাগলেন রোহিনী।
বন্ধুর সংখ্যা কমই ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনে। সাক্ষাত্কারে নিজের মুখে সুশান্ত বলেছেন আমার মাত্র দুজন বন্ধু। সুশান্তের সেই সীমিত সংখ্যক বন্ধুর মধ্যেই পড়েন রোহিনী আইয়ার। পেশায় বলিউড পাবলিসিস্ট রোহিনী এখনও মেনে নিতে পারছেন না প্রিয় বন্ধুর চলে যাওয়াটা। তবে সুশান্তের মৃত্যুর পর অভিনেতার ব্যক্তিগত,পেশাগদ জীবন নিয়ে যে কাটাছেঁড়া চলছে তাতে বিধ্বস্ত রোহিনী। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বেশ কিছু সেলেব্রিটির অভিনেতাকে নিয়ে দেখানো ভুয়ো ভালোবাসায় ক্লান্ত এবং ক্ষুদ্ধ রোহিনী। তাই দুটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে চ্যাঁচাছোলা ভাষায় একদিকে যেমন বলিউডকে আক্রমণ করলেন তেমনই রোহিনী সাফ জানিয়ে দিলেন ইন্ডাস্ট্রি লবিবাজির পরোয়া সুশান্ত কোনোদিনও করেনি। ওর নিজের জগত ছিল। ও সেখানে জিততে জানত।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনও ক্যাম্পের তোয়াক্কা কোনওদিন সুশান্ত করতেন না। কোনও লববাজি মধ্যেও পড়তেন না। সুশান্তের একটি নিজের জগত ছিল। সেই জগতটা ছিল সূর্যের মতো বড়। তাই কোনওদিন কোনও সিনেমা কিংবা বলিউডের বিভিন্ন ক্যাম্পের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। এবার এমনই মন্তব্য করলেন রোহিনী।
এটা বলতেই হত। আমার প্রিয় বন্ধু আর নেই,এই সত্যিটা মেনে নেওয়াটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কঠিন কাজ, এর মধ্যেই যখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ যাচ্ছে,ওকে নিয়ে কোনও না কোনও খবর। আর সেখানে দেখছি কিছু ফেরিওয়ালা নিজেদের অ্যাজেন্ডার প্রচার চালাচ্ছে,নিজের উদ্দেশ্য সফল করতে চাইছে। প্রত্যেক ব্যক্তি যাঁরা প্রচারের আলোয় আসতে চায়,তাঁদের ওর জীবন নিয়ে কোনও মন্তব্য আছে। বিশ্বাস করুন,ও নিজে ফেম কিংবা আপনাদের এই মতামতের পরোয়া করত না। ও পরোয়া করত না সেই মানুষগুলোর যাঁরা এখন আপসোস করছেন কেন সুশান্তের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখেননি। ও ঘৃণা করত ফেক বন্ধুদের, ফোন কলস এবং লোক দেখানো কথাবার্তাকে। ও রিজেক্ট করেছে তোমাদের পার্টি, তোমরা ওকে দূরে ঠেলে দাওনি। ও রিজেক্ট করেছে তোমাদের লবি'।
ওর ক্যাম্পের প্রয়োজন হয়নি,ওর নিজের একটা রাজত্ব ছিল, ও লড়াই করতে জানত। ও নিজের জায়গা করে নিয়েছিল জ্বলন্ত সূর্যের মধ্যে। ও আউটসাইডার ছিল এবং বিশ্বাস করুন ও ইনডাইসার হওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। কারণ ছবির বাইরেও ওর একটা জগত ছিল,ইন্ডাস্ট্রি ওর জীবনে ক্ষুদ্র একটা অংশ,এর বাইরে অনেক অনেক জগত ওর ছিল। ও সাক্সেস নিয়ে চিন্তা ছিল না, তবে ও অসফল হয়নি কোনদিন। ওর সমসমায়িক কোনও হিরোর থেকে অনেক বেশি সুপারহিট ছবি সুশান্ত দিয়েছে। ও অ্যাওয়ার্ডের পরোয়াও করত না। ও একটা অ্যাওয়ার্ড সেরেমানি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল কারণ ও প্রচন্ড বোর হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সেরা অভিনেতার ক্যাটেগরিটার ঘোষণা পর্যন্ত হয়নি। তোমাকে অনেক কিছু দিতে হত ওঁর আগ্রহ নিজের উপর কেন্দ্রীভূত করতে,তার জন্য একটা অ্যাওয়ার্ড যথেষ্ট নয়।
ও প্রকৃতির একটা শক্তির উত্স। ওর শিক্ষাদীক্ষা,বিচরণের জগত বহুমুখী। ও ঠিক ততটাই সরল যতটা কোয়ান্টাম ফিজিক্স। ও একজন ক্রেজি জিনিয়াস। ও সার্ত্র আর নীটশের লেখা পড়ত, জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং বৈরাগ্যদর্শন ছিল ওর পছন্দের বিষয়, ও কবিতা লিখত, গিটার বাজাত, ডান ও বাম দুই হাত দিয়ে লিখতে পারত। ও এই পৃথিবীকে বাঁচাতে চেয়েছিল, এই পৃথিবীর পরোয়া করত, মঙ্গলে যাওয়া ছিল ওর স্বপ্ন, ও বহু চ্যারিটিতে দান করত, সায়েন্স প্রজেক্ট এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় যুক্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াত-ও আসলে তোমাদের নাগালের বাইরে। তাই দয়া করে ওকে বোঝার বা ওর ট্যালেন্টকে ছোট করে নিজেদের অ্যাজেন্ডা পূরণ করতে যেও না'।
অপর একটি পোস্টে রোহিনী লেখেন, যদি তোমরা ওকে নিয়ে কিছু বলতে চাও তাহলে ওর কাজকে সেলিব্রেট কর। ওর জীবনটা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’,ঠিক যেমন ছবি ও বানাতে চাইত। ওর কাজকে মনে রাখ। ওর মন আর আত্মা নিজের কাজের মধ্যে ও ঢেলে দিয়েছে,মেক আপের থেকে রিসার্চ নিয়ে ও বেশি ভাবত। ও শ্রেষ্ঠ,অসার নয়। ও একজন উজ্জ্বল তারা। তাই ও জাদু ছড়িয়েছে,ওর সেই শ্রেষ্ঠত্বকে সেলিব্রেট কর। ও সেরা হতে চাইত,সাধারণ কিছু ওর না-পসন্দ। প্রচলিত কোনওকিছুই ওর পছন্দ হত না,যা চাইলেই পাওয়া যায় -তাই তো গডফাদারদের রিজেক্ট করেছে, বড় ব্যানারের ছবিকে রিজেক্ট করেছে যে ছবিতে ও বিশ্বাস রাখেনি। অনেক বড় বড় মানুষজনের ফোন ও ধরেনি,কারণ ও ধরতে চায়নি'।
রোহিনীর এই মনখোলা পোস্টকে স্বাগত জানিয়েছে বলিউডের একাংশ। রবিনা টন্ডন,অদিতি রাও হায়দারি, পত্রলেখা,রিচা চড্ডারা সহমত রোহিনীর সঙ্গে। সুশান্তকে রবাবরই নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড বলে দাবি করতেন রোহিনী, আর এই বেস্ট ফ্রেন্ড যে আজীবন তাঁর মনের মধ্যে,তাঁর স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে তাও বলেছেন তিনি। একটা সময় সুশান্তের ম্যানেজার হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। খুব কাছ থেকে দেখেছেন এই বন্ধুকে। সুশান্ত বলিউডের আসল ‘বেফিরকে’ তা নিজের পোস্টে বুঝিয়ে দিলেন রোহিনী আইয়ার।