শ্রীদেবীর অকাল মৃত্যুর যন্ত্রণা এতো বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তাঁর ভক্তরা। দুই মেয়েকে বড় করতে স্বেচ্ছায় ছবির জগত থেকে নির্বাসন নিয়েছিলেন শ্রীদেবী। সুদীর্ঘ দেড় দশক পর গৌরী শিন্ডের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির সঙ্গে রুপোলি পর্দায় কামব্যাক করেন বলিউডের ‘রূপ কি রানি’। সম্প্রতি এক দশক পূর্ণ করল এই ছবি। শ্রীদেবীর কামব্যক ছবি শুধু বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য পায়নি, সমালোচকরাও ভূয়সী প্রশংসা করেছিল এই ছবির। চল্লিশের গণ্ডি পার করা বহু মহিলাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছিল এই ছবি। কিন্তু এই ছবি তৈরির জার্নিটা বেশ কঠিন ছিল পরিচালক গৌরীর কাছে।
১০ বছর পর পরিচালক স্মৃতির পাতা উল্টে জানিয়েছেন, প্রযোজকরা শুরুতে খুশি ছিলেন না এই ছবি তৈরির ধরণ নিয়ে। গৌরীর কথায়, ‘আমি চেয়েছিলাম একটা নারীকেন্দ্রিক ছবি বানাতে, সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক, তবে সময় যত গড়িয়েছে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা শাড়ি পড়ে স্ক্রিনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন ছবিতে কে পয়সা লাগাবে? ছবিতে কোনও মারপিট নেই, সেক্স নেই, এমন কিছুই নেই যা চটজলদি দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। নরকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল’।
প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীদেবীকে এই ছবিতে দেখা গিয়েছিল একজন মধ্যবিত্ত গৃহবধূর চরিত্রে, যিনি গৃহকর্মে নিপুণা হলেও ইংরাজি বলতে জানেন না। তাই স্বামী এবং সন্তানদের কাছেও ব্রাত্য শশী (শ্রীদেবীর চরিত্র)। সেইখান থেকে শশীর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই এই ছবি। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এ শ্রীদেবীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আদিল হুসেন। তবে এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানালেন সেই নিয়ে আপত্তি ছিল প্রযোজকদের। তাঁরা চেয়েছিলেন কোনও বলিউড সুপারস্টার যেন অভিনয় করে শ্রীদেবীর স্বামীর চরিত্রে। এখানেই শেষ নয়, পরিচালকের কাছে কড়া নির্দেশ ছিল ছবিতে শ্রীদেবীকে আইটেম গানে নাচতে হবে, কারণ তিনি শ্রীদেবী! এরপরই গৌরী সিদ্ধান্ত নেই, প্রয়োজন পড়লে এই ছবি তৈরি করবেন না, কিন্তু নিজের চিত্রনাট্যের সঙ্গে কোনওভাবেই আপোস করবেন না। এরপরই গৌরীর পরিচালক স্বামী (আর বাল্কি) সিদ্ধান্ত নেই এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে নেবেন। তারপরই নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ তৈরি করেন আর বাল্কি ও গৌরী শিন্ডে।
গৌরী জানিয়েছেন এই ছবির অনুপ্রেরণা তাঁর মা। মশলার ব্যবসা করেন পরিচালকের মা। তিনি মনে করনে, ইংরাজি ভাষাটা রপ্ত করতে পারলে তাঁর ব্যবসা আরও বেশি সফল হতো। সেই থেকেই এই ছবির আইডিয়া মাথায় এসেছিল গৌরীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সাফল্যের মাপকাঠি ইংরাজি ভাষা। মানুষজন তোমাকে সঠিক মর্যাদা দেবে না যদি না তুমি এই ভাষাটা বলতে জানো’।
শ্রীদেবীর সঙ্গে কোনও পূর্বপরিচয় ছিল না। তবুও নবাগতা পরিচালকের উপর ভরসা দেখিয়েছিলেন শ্রীদেবী। প্রথমবার চিত্রনাট্য শুনেই বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি চিনি না, তবে এই ছবিটা আমি করছি, আমার জীবনের অন্যতম সেরা স্মৃতি ওই দিনটা’।
ছবির এক দশক পূর্তিতে উচ্ছ্বসিত পরিচালক। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর সাফল্যের পর গত দশ বছরে মাত্র একটি ছবি করেছেন গৌরী শিন্ডে, ডিয়ার জিন্দেগি (২০১৬)। এই ছবিও ব্যবসা সফল। গত ৬ বছরে নতুন ছবির কাজে দেননি পরিচালক। গৌরীর নতুন প্রোজেক্টের দিকে তাকিয়ে হিন্দি ছবির দর্শক।