আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে গত রবিবার রাজপথে নেমেছিল দক্ষিণ কলকাতার ৫২ টি স্কুলের প্রাক্তনীরা। গড়িয়াহাট টু রাসবিহারী পর্যন্ত চলে এই মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাতাস। চারিদিকে কেবল একটাই স্বর শোনা যাচ্ছিল, 'উই ডিম্যান্ড জাস্টিস ফর আরজি কর।' কিন্তু কীভাবে এই ৫২টি স্কুলকে একত্রিত করলেন উদ্যোক্তারা? জানল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন: খুদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেব! টেক্কার ঝলক সামনে এনে লিখলেন, 'এবার শেষ খেলা শুরু...'
কী জানালেন উদ্যোক্তারা?
এদিন জগবন্ধু ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র তথা দক্ষিণ কলকাতার প্রাক্তনীদের নিয়ে আয়োজিত এই মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস দাস HT বাংলাকে জানান, 'প্রথমে আমরা যখন শুরু করি ৪-৫ টা স্কুল মিলে শুরু করেছিলাম। প্রথম মিছিল আমরা ফার্ন রোড থেকে শুরু করে ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক হয়ে আবার ফার্ন রোডে ফিরেছিলাম। তখন আমরা, মানে জগবন্ধু ইনস্টিটিউশন, কমলা গার্লস, পরেশনাথ, লেক গার্লস, কমলা চ্যাটার্জি স্কুলের প্রাক্তনীরা ছিলাম। আমরা যখন এই উদ্যোগ নিই ভেবেছিলাম বড় জোর ২০০-৩০০ জন মানুষকে পাশে পাব। কিন্তু সেদিন গিয়ে দেখি প্রায় ১৩০০-১৫০০ মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগ দেন সেই সন্ধ্যাবেলা। তারপর আমরা ধীরে ধীরে অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করি, বা তাঁরা যোগাযোগ করে। এই ভাবে মানুষ জুড়ে জুড়ে গত রবিবার ৫২ টি স্কুলের প্রাক্তনীরা আমরা গত রবিবার একসঙ্গে পথে নেমেছিলাম। কোনও স্কুল থেকে কম কোনও স্কুল থেকে বেশি। কিন্তু আমরা মোট ৫২ টা স্কুলের প্রাক্তনীরা ছিলাম।'
তিনি এদিন আরও জানান যে আগামীতেও তাঁদের বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। তবে সবটাই নির্ভর করছে তদন্ত প্রক্রিয়া কোন দিকে এগোয় বা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে চিকিৎসকদের যে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে সেখানে কী হয় সেটার উপর।
আরও পড়ুন: 'লন্ডন বানাতে গিয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া...' আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা কনীনিকার
কী ঘটেছিল রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর?
পুজোর আগের একটি রবিবার। হিসেব মতো বাজার বা শপিং মলগুলোতে ঠাসা ভিড়, কেনাকাটা চোখে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি সেদিন। বরং দিনটা যেন অন্যান্যবারের পুজোর আগের দিনের থেকে অনেকটাই আলাদা। একটা মেয়ের খুনের বিচার চেয়ে গোটা শহর যেন নেমে পড়েছিল রাস্তায়। রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর গড়িয়াহাট চত্বর পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় একপ্রকার। ৫২ টি স্কুলের প্রাক্তনীদের মিছিল যে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। মিত্র ইনস্টিটিউশন, মাল্টিপারপাস স্কুল ফর গার্লস, চেতলা গার্লস, বিদ্যা ভারতী, সারদা, রমেশ মিত্র, সহ একাধিক স্কুল অংশ নিয়েছিল এদিন। চারিদিকে কেবল কালো মাথা আর দ্রুত বিচারের দাবিই দেখা বা শোনা যাচ্ছিল। সময় ঠিক ৪ টে। আর তখনই কথা মতো শুরু হল মিছিল। আকাশ বাতাস ছেয়ে গেল জাস্টিস স্বরে। যাঁরা কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গড়িয়াহাটে তাঁরাও কেউ কেউ যোগ দিলেন মিছিলে । কেউ আবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই স্লোগান তুললেন।
মিছিল যখন দেশপ্রিয় পার্কের কাছে তখনই খবর এল জুনিয়র চিকিৎসকরা এবং নির্যাতিতার বাবা মা আসছেন এই মিছিলে যোগ দিতে। সকলের উৎসাহ যেন দ্বিগুন হয়ে গেল। মাঝপথে মিছিল থামিয়ে ঠিক বিকেল ৫টা নাগাদ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল। সন্ধ্যা সাতটার আশেপাশে যখন পুরো মিছিল রাসবিহারী এসে পৌঁছল যখন, তখন মানববন্ধন গড়ে তোলা হল ধীরে ধীরে। নির্যাতিতার বাবা এসে প্রশ্ন তুললেন কেন যেখানে অন্যান্য দিন তাঁর মেয়ে ১০-১৫ মিনিটও বিশ্রাম নিতে পারেন না, কেউ না কেউ এসে ঠিক খোঁজে। সেদিন ৭-৮ ঘণ্টা পরেও কেন কেউ খুঁজতে এল না? কেন জানানো হল তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন? অন্যদিকে নির্যাতিতার মা কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন অঝোরে। মশাল জ্বালিয়ে, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে চলল দ্রুত বিচারের দাবি। দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ততক্ষণে পুরো স্তব্ধ। কোনও যান চলাচল নেই। পথে যে বাস আটকে পড়েছিল তাদেরও আলো নিভিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেল। পরিশেষে জাতীয় সঙ্গীত দিয়েই সেদিন এই মিছিল শেষ হয়।