অরিজিতের স্কুটি চেপে এড শিরানের জিয়াগঞ্জ ভ্রমণের দৃশ্য এখনও নেটিজেনদের চোখে লেগে তারপর আবার মার্টিন গ্যারিক্সের সঙ্গে যুগলবন্দি। কিন্তু তাতেও কোনও পরিবর্তন ছুঁতে পারেনি গায়ককে। এখনও একেবারে সাদামাটা ভাবে সারল্য নিয়েই ধরা দেন অরিজিৎ। আর তাঁর এই অদ্ভুত স্বভাব নিয়েই এবার সমাজমাধ্যমের পাতায় কলম ধরলেন সঙ্গীত শিল্পী অভিষেক চক্রবর্তী।
শনিবার একটি পোস্ট করে অভিষেক লেখেন, ‘অরিজিৎ সিং খুব গোলমেলে একজন লোক। কিছুদিন আগে দেখলাম এড শিরানে কে স্কুটিতে চাপিয়ে জিয়াগঞ্জের গলিতে ঘুরছেন। কোনও দিন ভাবিনি জিয়াগঞ্জ আর এড শিরান একসঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে।গতকাল দেখলাম মার্টিন গ্যারিক্স ওঁর জিয়াগঞ্জের বাড়ির ছোট্ট সোফায় বসে একসাথে গান তৈরি করছেন। দুইজনের ক্ষেত্রেই দেখে মনে হল না কোনও আলাদা আয়োজন করা হয়েছে।’
এরপর অভিষেক মধ্যবিত্ত বাড়িতে অতিথি এসে যে আয়োজন হয়, সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এলোমেলো ঘর, যেমনটা মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে থাকে। আমার আপনার মামাতো ভগ্নিপতির খুড়তুতো দাদা গোছের কেউ বাড়ি এলে সাধারণত যে বিষয়গুলো মধ্যবিত্ত বাঙালি করে থাকে (বাবার বিয়েতে পাওয়া বেডকভার বার করা, ঘরের সব খুচরো জিনিষ পর্দার পেছনে লুকিয়ে ফেলা অথবা প্রচন্ডভাবে যত্নে তুলে রাখা দামী চায়ের কাপ উদ্বোধন করা) সেগুলোও মনে হয় না অরিজিৎ করেছেন। রোজ যেমন থাকেন, ঠিক সেরকমই সবকিছু। আমাদের ছোটবেলা থেকেই ‘My life, my rules’ বলে একটা caption মুখে মুখে ঘুরত। এখন সেটা এসে ‘Mah life, mah rules’ এ বিবর্তিত হয়েছে। এই anti establishment caption অনেক ক্ষেত্রেই কিশোর কিশোরীদের টি-শার্টে দেখতে পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত তাদের কাছে সবচেয়ে বড় এবং বিরক্তিকর প্রতিষ্ঠান তার বাবা, মায়ের তৈরি করা নিয়ম যা তার ওই বয়সের নানান অ্যাডভেঞ্চারে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখান থেকেই এর উৎপত্তি। আমি কোনও মধ্যবয়স্কা গৃহকর্ত্রীকে ওই টিশার্ট পরতে দেখিনি। তবে সত্যই যদি কেউ এই টি-শার্ট পরার যোগ্য হন, তাঁর মধ্যে অন্যতম বোধহয় অরিজিৎ সিং।'
আরও পড়ুন: আর দেখা যাবে না ‘শৌর্য’কে! সত্যি বন্ধ হচ্ছে মিঠিঝোরা, সপ্তর্ষির পোস্ট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
তাঁর কথার যুক্তি হিসেবে সঙ্গীত শিল্পী বলেন, ‘লোকটা সমাজের সমস্ত শ্রেনীকে একসঙ্গে নাড়িয়ে দিচ্ছেন। শিল্পীরা ভাবছেন এত খরচ করে হোম স্টুডিও বানালাম না করলেও বোধহয় চলে যেত। পি আর এজেন্সিগুলো বুঝতে পারছেন না ওটা বিনয়, না পাবলিক রিলেশনশিপ, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কসভা বসেছে কলকাতার বৈঠকখানাগুলোতে। মায়েরা ভাবছেন ওঁর বাড়িতেও ঠিক ওই লাল কমলা চেক চেক বিছানার চাদরটাই ছিল, একটু বেশি ‘loud’ ভেবে শুধু শুধু দামী একটা বিছানার চাদর কিনলেন ছেলের জন্মদিন হবে বলে। যাঁরা জিয়াগঞ্জে থাকেন এবং ভাবছিলেন ওখানকার বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় শিফট করা দরকার, তাঁরাও নিশ্চই মহা সমস্যায় পড়েছেন। বুঝতে পারছেন না এর প্রভাব বাড়ির দামের ওপর কতটা পড়বে। নিশ্চই চায়ের দোকানের কোনও জেঠু উপদেশ দিচ্ছেন আর কিছুদিন বিষয়টা দেখতে। কোনও ভাবে Trump বা Putin এলে খেলা ঘুরে যাবে। রিকশা থেকে টোটো, সবাই ভাড়া চাওয়ার আগে দুবার ভেবে নিচ্ছেন। আমি ভাবছি জিয়াগঞ্জের সাধারণ মানুষের অসহায়তার কথা। রাস্তায় বিদেশি দেখলেই নিশ্চই কাজ ফেলে google করতে হচ্ছে। কী বিড়ম্বনা বলুন তো!’
তাঁর কথায়, ‘এইসমস্ত থেকে একমাত্র যিনি বিরত তিনি বোধহয় অরিজিৎ সিং নিজে। সেটা না হলে এরকম একটা জীবনযাপন করা যায়না। আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যাঁরা গরীব থাকতে মনে প্রাণে কমিউনিস্ট ছিলেন। চাকরি পাওয়ার পর হঠাৎ করে Open market এর পক্ষ নিয়েছেন। বড়লোক এবং প্রকৃত অর্থে সমাজতন্ত্রে যোগ দান করেন, এই উদাহরণ আমি অন্তত দেখিনি। এই কারণেই অরিজিৎ সিং তাঁর গানের বাইরেও অনন্য। এইরকম মানুষ দেখলে অরুণদার ’ভিক্ষেতে যাবো' গানটার কথা মনে পড়ে যায়।'