তাঁর নামেই রয়েছে ঠাকুর! বাঙালিও তাঁকে দিয়েছে ভগবানের দরজা। আজও একাংশ মানুষ হাত জোড় করে দাঁড়ায় শান্তস্নিগ্ধ মুখের রবি ঠাকুরের সামনে। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষীকি পালন হয় যে কোনো বড় উৎসবের মতোই। বাঙালির সেই আবেগেই আঘাত হেনেছে কপিল শর্মার কমেডি শো। আর এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করেছেন কবি শ্রীজাত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একলা চলো রে নিয়ে মস্করা করার জন্য, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও লেখেন তিনি বৃহস্পতিবারে।
আর এবার তাতে ক্ষমা চাইলেন শোয়ের কৌতুক অভিনেতা ক্রুষ্ণা অভিষেক। তিনিই মূলত সেই বিচ্ছিরি মস্করাটি করেছিলেন। যাতে সঙ্গত দিয়েছিলেন কপিল ও বাঙালি অভিনেত্রী কাজল।
বিতর্ক বাড়তেই তা নিয়ে মুখ খুললেন ক্রুষ্ণা। তিনি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানান, ‘আমি বা আমার দলের কোনো সদস্যর কাউকে আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমরা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য পারফর্ম করি এবং কাওকে আঘাত করার জন্য নয়। আমি সৃজনশীল দলের সাথে কথা বলব এবং দেখব কী করা যায়।’
আর তারপর ক্রুষ্ণার ক্ষমা চাওয়ার সেই খবরটি শেয়ার করে শ্রীজাত ফের পোস্ট করেছেন, ‘কাউকে আঘাত করা নয়, কেবল বিনোদনই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। আমার অভিযোগের উত্তরে জানালেন কৌতুকাভিনেতা কৃষ্ণ অভিষেক। এ-বিষয়ে 'The Great Indian Kapil Show'-এর নেপথ্যে থাকা creative team-এর সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। একদিনের অবকাশে এটাও আমার কাছে অনেকখানি।’
কী ছিল গোটা ঘটনা?
বৃহস্পতিবার শ্রীজাত ফেসবুকে লেখেন, ‘দিনপাঁচেক আগে NETFLIX-এ ‘The Great Indian Kapil Show’-এর একটি নতুন পর্ব সংযোজিত হয়, যেখানে অতিথিদের মধ্যে অভিনেত্রী কাজল ও কৃতী স্যানন উপস্থিত থাকেন। সেই পর্বের মাঝামাঝি সময়ে কপিলের এক সহকারী শিল্পী বা কৌতুকাভিনেতা কৃষ্ণ অভিষেক উপস্থিত হন (যিনি নিজের নাম Krushna Abhishek লেখেন), এবং সম্ভবত কাজলকে বাঙালি বংশোদ্ভুত হিসেবে পেয়েই রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে মস্করার সরঞ্জাম হিসেবে বেছে নেন…’
সেই এপিসোডে দেখা যায় ক্রুষ্ণা স্টেজে এসেই কাজলকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘আমি কখনো একা যাই না’। আর তাতে কপিল বলছেন, ‘একলা চলো রে…’! এবার ক্রুষ্ণা বলেন, ‘জীবনে চার বা পাঁচজনের দল বানিয়ে হাঁটো। একলা নয়। একদিন আমি রাস্তায় একা হাঁটছিলাম আর চার-পাঁচটা কুকুর আমায় ঘিরে ধরে। আমি জানি একমাত্র, সেদিন নিজেকে কীভাবে বাঁচিয়েছি… আমি তাই সবসময় তিন, চার বা পাঁচজন নিয়ে হাঁটার পক্ষপাতি।’
শ্রীজাত নিজের পোস্টে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আরও লিখেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত, গালিব, কবীর বা প্রেমচন্দের লাইন নিয়ে এমন কুৎসিত মস্করা করার সাহস হতো না এঁদের। পরের দিন শো বন্ধ হয়ে যেত। বাঙালি এসব ঠাট্টায় অভ্যস্ত, অতএব বাঙালিকে নিয়ে মস্করা করাই যায়, তাও আবার একজন বাঙালি অভিনেত্রীর সামনে, যিনি এই মস্করায় হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমার এহেন লেখায় যদি কারও মনে হয় আমি প্রাদেশিক, তাহলে কিছু করার নেই। আমি তবে গর্বিত প্রাদেশিক। সেইসঙ্গে এটাও বলি, যিনি আমার দেশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন (বাকি অন্যান্য অনেক কিছু যা যা করেছেন সেসব আর বললাম না), তাঁর প্রতি পরিকল্পিত অসম্মানে ক্ষুব্ধ হতে গেলে প্রাদেশিকতা লাগে না। ‘The Great Indian Kapil Show’-তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর গানের অবমাননা করার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন সামান্য অক্ষরকর্মী হিসেবে আমি অসম্মানিত ও আহত বোধ করছি। আমি মনে করছি, এ-অসম্মান রবীন্দ্রনাথের একার প্রতি নয়, বরং সমস্ত ভারতীয় ভাষাভাষী শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি অসম্মান, বাংলা যার মধ্যে অন্যতম ভাষা।’
সঙ্গে কপিলের শো-র নির্মাতাদের উদ্দেশে বার্তা দেন, ‘উল্লিখিত পর্বের ওই অংশটি পুনর্সম্পাদনা করবার দাবিও থাকল। ছেড়ে দিলে দেওয়াই যায়, কিন্তু কতদিন এবং কতদূর ছাড়ব, সেটা ভাবা দরকার। আমি সামান্য লোক, আমার চাওয়ায় কারও কিছু যায় আসে না হয়তো। কিন্তু তবু চাইছি। আজকের দিনে খবর পৌঁছতে সাত সেকেন্ডের বেশি লাগে না। আমি সাতদিন সময়সীমা ধার্য করলাম, বিনীতভাবেই। আর হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবি’র সঙ্গে পরামর্শ করেই এই পোস্ট লিখছি, এটাও জানিয়ে গেলাম। আজ থেকে এক সপ্তাহ, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর, ২০২৪-এর মধ্যে আমার দাবিগুলি গৃহীত, বিবেচিত এবং পূর্ণ না-হলে আমি আইনের পথে হাঁটব। বাংলা ভাষার একজন শব্দশ্রমিক হিসেবেই হাঁটব। আর কেউ আমার সঙ্গে না-থাকলেও হাঁটব। কেননা রবীন্দ্রনাথ তো বলেইছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে!’