টেলিভিশন অভিনেতা মনমীত গেরেওয়ালের আত্মহত্যার বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারছেন না তাঁর পরিবার ও পরিচিতরা। লকডাউনে কাজ হারিয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়েছেন আত্মঘাতী হলেন জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা। বয়েস হয়েছিল ৩২ বছর। এবার তাঁর আত্মহত্যা নিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন তাঁর কাছের বন্ধু মনজিত। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে তিনি জানান, তাঁরা বন্ধুর চেয়েও বেশি ভাইয়ের মতো। ছয় বছর ধরে মনমীতকে চিনতেন মনজিত। তিনি বলেন, ‘ওর সঙ্গে বিকাল পাঁচটার সময় আমার কথা হয়েছে সেদিন। ও একদম ঠিকঠাক ছিল,স্বাভাবিকভাবে কথা বলল ফোনে। সব সমস্যার কথা ও আমাকে জানাত’। মনজিত আরও বলেন, মনমীতের একজন পরিচিত ও কাছের বন্ধু দিন চারেক আগেই আত্মহত্যা করেছেন। সেই নিয়েও একটু চিন্তিত ছিলেন মনমীত। মনজিত জানান, 'আমি আর মনমীত একটা বিদেশ সফরে গিয়েছিলাম সেটার জন্য মনমীত বেশ কিছু টাকার লোন নিয়েছিল। সেই টাকা ফিরত দিতে পারছিল না সে’।
শুক্রবার রাতে নভি মুম্বইয়ের আবাসনে আত্মহত্যা করেছেন মনমীত সিং। আদত সে মজবুর, কূলদীপকের মতো বেশ কিছু সিরিয়ালে তিনি অভিনয় করে জনপ্রিয় হন। জানা গিয়েছে, স্ত্রী রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত থাকার সময় নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন মনমীত। এর পর হঠাৎ চেয়ার উলটে পড়ার শব্দ শুনে ঘরে ঢুকে তাঁকে গলায় দোপাট্টার ফাঁস দিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান অভিনেতার স্ত্রী।
স্বামীকে ফাঁস থেকে মুক্ত করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে চিৎকার করে সাহায্য চাইতে থাকেন মনমীতের স্ত্রী। প্রতিবেশীরা ছুটে এলেও তাঁর করোনা সংক্রমণ ঘটেছে ভেবে কেউ মনমীতকে ফাঁস থেকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসেননি। শেষে এক নিরাপত্তারক্ষী এসে ফাঁস খুলে দেহহ উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মনমীতকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে জানান চিকিৎসকরা।
মনমীত বেঁচে থাকলেও সেইসময়ই কোনও প্রতিবেশি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি, এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ মনজিত। তিনি বলেন, ‘শুনলাম সবাই ভিডিয়ো করছিল কিন্তু কেউ ওঁর স্ত্রীর কান্না শুনেও ওকে বাঁচাতে এগিয়ে গেল না,ভাবতেই পারছি না’।
পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনে কাজের সুযোগ না পেয়ে বেরোজগেরে হয়ে পড়েন মনমীত। এ দিকে বাজারে তাঁর প্রচুর টাকা ধার ছিল। বাড়িভাড়ার মাসিক ৮,৫০০ টাকাও তিনি জোগাড় করতে পারেননি। স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে সামান্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করলেও তাতে বেশি দিন খরচ সামলানো যায়নি।
বছর দুয়ের আগেই বিয়ে করেন মনমীত। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি, পঞ্জাবের বাড়িতে তাঁর বাবা-মা রয়েছেন।