আড্ডা টাইমসে নতুন ওয়েব সিরিজ
এই লক ডাউনের মধ্যেই আড্ডা টাইমসে শুরু হয়েছে আমার অভিনয় করা নতুন ওয়েব সিরিজ 'দ্য লস্ট ট্রাইব'। পরিচালক শিবাংশু ভট্টাচার্য্য। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি একটু ভিন্ন স্বাদের কাজ দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে। সবাই তো এখন গৃহবন্দী, টিভিতে নতুন কিছু দেখতে পেলে সময়টা একটু ভালো কাটবে। সেই কথা ভেবেই এই সময় ওয়েব সিরিজটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসা হল। ১৮-ই মার্চ থেকে আমাদের শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জি-বাংলায় কৃষ্ণকলি আর সান বাংলায় সর্বমঙ্গলা, এই দুই ধারাবাহিকে আমার কাজ চলছিল। এখন যা পরিস্থিতি তাতে কিচ্ছু বলা যাচ্ছে না যে আবার কবে থেকে শুটিং শুরু করা যাবে।
প্রকৃতি ফিরছে নিজের লাবণ্যে
আপাতত টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট বন্ধ করে বারাসাতের বাড়িতে চলে এসেছি। এখানে বাবা, মা এবং পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। তবে আমার ক্ষেত্রে পরিবার বলতে কেবলমাত্র বাড়ির কয়েকজন মানুষ নয়, আমি একটা বৃহৎ পরিবারের অংশ। আমাদের কামাখ্যা বালক আশ্রম, আমার বারাসতে থাকা মানেই আশ্রমের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জরিয়ে থাকা। অন্য সময় মেগা সিরিয়ালের শুটিং এর খুব চাপ থাকে। আলাদা করে ছুটি পাওয়া মুশকিল। তখন কাজের ফাঁকে একটু সুযোগ পেলেই চলে আসি এখানে। অনেকেরই এই সময় বাড়িতে একঘেয়ে লাগছে, তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াতে সে কথা পোস্টও করছেন। আমি কিন্তু একটুও বোর হচ্ছি না, সকাল থেকে আশ্রমের অনেক কাজ, সেই কাজে হাত লাগিয়েছি, তবে অবশ্যই সচেতনতা বজায় রেখে। এছাড়া বাড়ির ছাদ থেকে পাখিদের ছবি তোলা আমার অন্যতম পছন্দের বিষয়। এই লকডাউনের ফলে প্রকৃতি আবার তার নিজের লাবণ্যে ফিরছে, চেনা অচেনা বহু পাখি এসে খেলা করছে বাড়ির পাশের খালি মাঠের গাছে।
কামাখ্যা বালক আশ্রম
প্রায় ৩০ বছর আগে আমার বাবা শ্রী মাধব ভট্টাচার্য্য এই আশ্রম গড়ে তোলেন। মূলত অনাথ এবং দুস্থ শিশুদের আশ্রয় দিতেই এই আশ্রম। যাদের কেউ নেই, বাবা, মা পরিবার কেউ না, এই সমাজে যারা সবচেয়ে অবহেলিত সেইসব বাচ্চাদের জন্য বাবা নিজের যা কিছু পুঁজি ছিল তাই দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলেন কামাখ্যা বালক আশ্রম। বাবার একটাই স্বপ্ন, এবং একটাই লড়াই , এই সমাজে যেন কোনও শিশু অনাথ না থাকে, এক টুকরো ছাদ যেন পায় সকলে। প্রত্যেকটা বাচ্চা যেন লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। শিক্ষা শিশুর অধিকার। এই স্বপ্ন সার্থক করতেই বহু লড়াই লড়ে বাবা আজ এই নিশ্চিন্ত আশ্রয় গড়তে সক্ষম হয়েছেন। ৬বিঘা জমিতে দু’টি স্কুল নিয়ে আমাদের এই আবাসিক আশ্রম। এখন ৬৫ জন বাচ্চা রয়েছে। রয়েছেন আবাসিক টিচাররা। এছাড়া আশ্রমের কাজকর্ম করেন এমন লোকজন তো আছেই। খুবই জটিল একটা পরিস্থিতি তাই সকলকেই সাবধানে রাখা হয়েছে। বাইরের কাউকে আশ্রমের ভিতর প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দৈনন্দিন যা প্রয়োজন নিজেরা বাইরে থেকে নিয়ে আসছি। বাচ্চারাও সব রকম সচেতনতা মেনে চলছে। বারবার হাত ধোওয়া, কোনও ভাবেই এলাকার বাইরে না যাওয়া, নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা, ইত্যাদি। স্কুলের পঠন পাঠন বন্ধ থাকলেও, আবাসিক টিচাররা যেহেতু বাড়ি যেতে পারেন নি, এখানেই রয়েছেন সেহেতু ওদের লেখাপড়া নিয়মিত চলছে। তার পাশাপাশি, খেলাধূলা, গান বাজনা, হাতের কাজ, শরীর চর্চার এই সব চলছে নিয়ম মেনেই। সকাল, সন্ধ্যে বাচ্চারা প্রার্থনা করে। যতটা সম্ভব বাচ্চাদের স্বাভাবিক পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চলছে আধ্যাত্মিক আলোচনার মাধ্যমে মনকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা।
মানুষ রয়েছেন দাদামণির সঙ্গে
বাবাকে সবাই দাদামণি বলেই ডাকেন এখানে। বাবার পাশে রয়েছেন অনেক সহৃদয় মানুষ। সারা বছর তাঁরা আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেন। কখনও বিয়ে, জন্মদিন বা আনন্দ অনুষ্ঠানে আশ্রমের বাচ্চাদের খাওয়ানো, বা বাচ্চাদের জন্য কিছু দানধ্যান , এতে আমাদের উপকার হয়। এইসময়ও কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের ধন্যবাদ।
লক ডাউনের নিয়ম মেনেই পুজো
প্রতি বছর আমাদের আশ্রমে ঘটা করে বাসন্তী পুজো হয়। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। এই বছর শুধু ঘট পুজো করেই পুজো সারা হয়েছে। বাগানের ফুল বেলপাতা দিয়ে বাচ্চারা নিজেরাই পুজোর জোগাড় করেছে। ফল প্রসাদ, নৈবেদ্য সব ওরাই সাজিয়েছে। অষ্টমীতে খিচুড়ি, লাবড়া হয়েছিল। দশমীতে পান্তা ভাত, কচুর শাক আর আশ্রমের পুকুরের মাছ ভাজা। এটা আনন্দ করার সময় নয়, এই অস্থির সময়ে নিজেদের যতটুকু ভালো রাখা যায় তার চেষ্টা মাত্র। তাছাড়া লকডাউনের মেয়াদ বাড়ছে, সেই নিয়েও চিন্তা রয়েছে। বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখাটাও জরুরি, বাবা সব দিকেই নজর রেখেছেন। আমরাও বাবার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছি। আশা রাখি মা সকলের মঙ্গল করবেন, খুব তাড়াতাড়ি আবার সব ঠিক হবে।