করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেছে পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’ অর্থাৎ সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। ইয়াস বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে যেতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তেমনি রবিবার দক্ষিণ বারাসতের বাজারের কাছে এক বৃদ্ধাশ্রমে টিমের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন অভিনেতা।
বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সব্যসাচী তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সামাজিক মাধ্যমের দেওয়ালে বেশ কিছু ছবি শেয়ার করেন তিনি। অভিনেতার কথায়, আবেগ বস্তুটা বাস্তবে বড্ড কঠিন। তেমনি বাস্তব জীবনেও আমরা অনেক কিছু কঠিনের রোজ সম্মুখিন হই। তেমনি এদিন বৃদ্ধাশ্রমে এক মায়ের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর।
তাঁকে নিয়ে কলম ধরেছেন অভিনেতা। জানিয়েছেন, ‘বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ হয়েছেন। সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গেছে তার দৃষ্টিশক্তি। তবে চেহারাতে এখনো আভিজাত্য বজায় আছে। কালীঘাটে বাড়ি, ছেলে ভালো চাকরি করে, নিজের পরিবার নিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিহীন মা কে নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। চিকিৎসা করানোটাও একরকম পয়সা নষ্ট বৈকি। অতএব মায়ের ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’।
সব্যসাচী পোস্টে আরো জানান, বহুদিন আগেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। অথচ অভিনেতার গলা নাকি তাঁর খুব চেনা। কীভাবে? ‘দৃষ্টি হারিয়েছেন অনেক দিনই, কিন্তু আমার গলা নাকি ওনার মুখস্থ। নিয়ম করে প্রতিদিন আশ্রমের টিভিতে মহাপীঠ তারাপীঠ ‘শোনেন’। আমায় বললেন, “তোমার গলার স্বর আমার বুকে আছে বাবা"। শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও আমায় গড় হয়ে প্রণাম করলেন এবং উঠে যা বললেন তাতে আমরা কিছুক্ষন কথা বলতে পারিনি’।
সব্যসাচীর কলমে উঠে এল বৃদ্ধাশ্রমের এক মায়েক কান্না ভেজা শব্দ। তিনি অভিনেতাকে বলেন, ‘আমার ছেলে বড় চাকরি করে, আমার যাতে কোনো কষ্ট না হয় তাই এখানে রেখেছে। খুব ভালো ছেলে আমার, ওকে একটু আশীর্বাদ করো বাবা’।
মা নিয়ে আবেগঘন অভিনেতার কলমে উঠে এল, ‘মা কাকে বলে জানো? এমন একটি মানুষ যার ওপর রাগ দেখানো যায়, অভিমান করা যায়, অপমান করা যায়, ‘তুমি ওসব বুঝবে না’ বলে পাশ কাটানো যায়, এমনকি অন্য কারোর ওপর জমা রাগ নির্দ্বিধায় তার ওপর বর্ষণ করা যায়। প্রেমিকার কাছ থেকে ‘খেয়েছিস?’ শোনার জন্যে ছটফট করা যায়, কিন্তু একই কথা মা বললেই তিতিবিরক্ত হওয়া যায়। মা জিনিসটাই কেমন যেন আঠালো, চটচটে একটি বস্তু। ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও যায় না, ঘেঁটি ধরে দূর করে দিলেও আবার বেড়ালের মতন ফিরে আসে। পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে গেলেও উল্টে জিজ্ঞাসা করে 'লাগেনি তো?’
অভিনেতা অবশ্য় বৃদ্ধাশ্রমে আবার যাবেন বলেন ঠিক করেছেন। পরের বার গেলে তাঁদের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করেই যাবেন বলে জানিয়েছেন। সঙ্গে দেখা করে আসবেন তাঁর বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের সঙ্গে।