৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার সারাদেশে পালিত হবে গণেশ চতুর্থী। এই দিনে ভগবান গণেশ আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে মানা হয়ে থাকে। বাঙালির দুর্গা মায়ের আদরের সন্তান, গণেশ। প্রত্যেকবার দুর্গাপুজোর আগেই প্রথা মেনে তাই বাঙালিরাও গণেশ চতুর্থী পালন করে থাকেন। তবে এবার এরাজ্যের যে আবাহ, তাতে ঘটা করে হয়ত গণেশ চতুর্থী পালন করার মানসিকতাতেও নেই বেশিরভাগ মানুষ।
তবে এবার গণেশ চতুর্থী শুরু হওয়ার ঠিক আগেই সিদ্ধিদাতা গণেশের দ্বারস্থ হলেন অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। আরজি কর কাণ্ডের পর মেয়েদের সুরক্ষা চেয়ে গণপতির কাছে প্রার্থনা করলেন অপরাজিতা। কিছুদিন আগেই তিনি নিজের হাতে মাটি দিয়ে গণেশ মূর্তি বানিয়েছিলেন। এবার সেই গণেশমূর্তিই তুলির রঙে রঙিন করে তুলেছেন অপরাজিতা। সেই গণেশমূর্তির ছবি পোস্ট করে ফেসবুকের পাতা লম্বা পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী।
ঠিক কী লিখেছেন অপরাজিতা আঢ্য?
অপরাজিতা লেখেন, 'বঙ্গ জীবনের সঙ্গে অংগাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছেন যে গণপতি, তার সঙ্গে চতুর্থীর চেয়ে হালখাতাকে মিলিয়ে ফেলতেই বেশি সচ্ছন্দ্য বোধহয় অধিকাংশ বাঙালী। হিন্দু পুরাণের সিদ্ধিদাতা যে ঠিক কোন লোকগাথার পাল্লায় পরে বাঙালীর একান্ত আপন স্থূলকায় ব্যবসায়িক প্রতীক হয়ে গেলেন, তার ইতিহাস সাংস্কৃতিক ভাবে দীর্ঘ ও জটিল!
তবে আজ যে সময়ে দাঁড়িয়ে গণেশ চতুর্থী এসে দরজায় কড়া নাড়ল, তখন ব্যবসা শব্দটা শুনলেই গা টা ঘিনঘিনিয়ে উঠছে! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সবকিছু নিয়ে যে ব্যবসার আসর সারা বাংলার ভাগ্যাকাশে, বারংবার মনে হচ্ছে আজ সিদ্ধিদাতাকেই প্রয়োজন! সিদ্ধি অর্থে প্রজ্ঞা, নৈতিক আদর্শ, চেতনার উন্মেষ, সিদ্ধি অর্থে কোথাও গিয়ে আজকের সময়ে সমষ্টিগত নবজাগরণ এবং আত্মবিশ্লেষণ- ও বৈকি! আমার কাছে এগুলোই তো প্রকৃত সম্পদ! অন্তত তেমনটাই হওয়া উচিত!'
অপরাজিতা প্রশ্ন, 'কিন্তু কোথায়, কোথায় এমন সিদ্ধির প্রতিফলন! ক্ষমতাশীল চেয়ারের নিচে অরাজকতার মূষিক (ইঁদুর) কুট কুট করে কেটে ছিন্নভিন্ন করছে সমাজ… সিদ্ধিদাতা কোথায়? মস্তিকের অন্ধকারে মানবিকতার লেশমাত্র দেখিনা রাষ্ট্র নামক যন্ত্রের সামনে। এই কী সংস্কৃতি? বঙ্গীয় বৈভব? বিশ্ববাংলার আস্ফালন?! গণতন্ত্রের গণেশ উল্টে গেছে খুন, কারচুপি, ধর্ষণের আড়ালে সে তো কবেই! তবে আর কিসের প্রজ্ঞা? কি বা সিদ্ধিদাতার উদযাপন? শুধু ব্যবসা?! তার বাইরে বাকি গুলো নাহলেও চলবে? সুখ করণীয়, দুখ হরণীয় গণপতি তুমি কী দেখছ না, তোমার কোটি কোটি সন্তান আজ রাজপথে, শুধু একটু নৈতিকতার আশায়!
প্রার্থনা, প্রার্থনার চেয়ে বড় সত্যি আমার কাছে কিছুই নেই, তাই প্রার্থনা করি, এই সমষ্টিগত মহা দুঃসময় যেন কাটিয়ে উঠি আমরা, অন্ধকার যেন নিপাত যায় অতিব নির্লজ্জতায় সিদ্ধিরূপী, ন্যায়রূপী মহান আলোর সামনে! আমার গণপতির পরনে চিকিৎসকের এপ্রন, তাতে ধর্ষকদের হাতের রক্ত ছাপ; গণেশের কোলে সেই অন্তঃসত্বা হস্তিনী যার নৃশংস খুন মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনা কিছুতেই! যখন এই মূর্তি তৈরী করছিলাম, সাবলীল ভাবেই অন্তরের আর্তনাদগুলো উৎসর্গ করেছি গণেশের মঙ্গলক চরণে, মঙ্গল কামনায়, সার্বিক সিদ্ধির আশায়।'
সবশেষে অপরাজিতার অনুভূতি এই সময়ে সিদ্ধিদাতাকেই বড় বেশি প্রয়োজন, ‘নিশিদিন সব কিছু হোক তিলোত্তমার, হোক সেই প্রতিটি অবহেলিত জীব কূলের যাদের মানুষ বা মনুষ্যেতর বিভেদ নেই তোমার কাছে। হে গণপতি, শুধু ব্যবসায়িক প্রতীক নয়, তুমি ন্যায়রূপ সিদ্ধি দান করো; এই সম্পদ আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।’