নিঃসন্তান তরুণ মজুমদারের ইচ্ছে ছিল তাঁর পারলৌলিক কাজ যেন করেন তাঁর তিন মানসকন্যা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী এবং দেবশ্রী রায়। মহুয়া অনেক আগেই চলে গেছেন। তবে গুরুর ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে এসেছেন দেবশ্রী রায়। পরিচালক তরুণ মজুমদার দেবশ্রীর কাছে পিতৃতুল্য, তাঁকে হারিয়ে অভিনেত্রী ঢুকরে কেঁদে বলেছিলেন, ‘বাবাকেই হারালাম’। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় ডাকাত কালী মন্দিরে তরুণ মজুমদারের পারলৌকিক কাজ সারলেন দেবশ্রী। সঙ্গে ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর নায়ক অয়ন।
এদিন লাল পাড়া সাদা শাড়িতে দেখা মিলল দেবশ্রী। শরীরটা ভালো নেই তাঁর। সর্দি-কাশি, সঙ্গে জ্বরও রয়েছে। পরিচালককে শেষবার দেখে এসে ঠাণ্ডা জলে স্নান করেছিলেন, তারপর থেকেই জ্বর। দেবশ্রীর কথায়, ‘এটা তাঁর প্রতি আমার গুরুদক্ষিণা’। অভিনেত্রী যোগ করেন, 'তরুণ মজুমদারের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েই তাঁর ছোট মেয়ে হিসেবে আমি তাঁর পরলৌকিক কাজটা করলাম। উনি চিরকালই চাইতেন ওঁর কিছু হলে আমরা যেন ওঁর কাজ করি। ওঁর সেই ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে ভীষণ শান্তি পাচ্ছি আমি।'

তরুণ মজুমদারের মৃত্যুর দিনেও অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় জানিয়েছিলেন, ‘ওনার দেওয়া নাম, উনি তৈরি করেছেন আমাকে, কত শিল্পীকে গড়েছেন তনুদা। তারমধ্যে আমিও একজন। এই দেবশ্রী নাম, শিক্ষা সবই ওঁনার থেকে পাওয়া… এই ঋণ, কৃতজ্ঞতা কোনওদিন ভোলবার নয়’।
১৯৭১ সালে তরুণ মজুমদারের ছবি কুহেলিতে রাণুর চরিত্রে কাজ করেছিলেন দেবশ্রী রায়। এরপর ‘দাদার কীর্তি’তেও অভিনয় করেন। ১৯৮৫ সালে মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর বাংলা সিনেমায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা খানিকটা হলেও ভরাট করেছিলেন দেবশ্রী। তরুণ মজুমদারের ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবিতে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন তিনি। দেবশ্রী রায়ের অভিনয় কেরিয়ার নিজের হাতে গড়ে দিয়েছেন তরুণ মজুমদার।
এদিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সেরেও পুরোনো দিনের স্মৃতিতে ডুব দিলেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘কালের নিয়মে সবাইকেই যেতে হবে, তবে নিজের সৃষ্টিতে তনুদা অমর’।