২০১৭-১৮ সাল নাগাদ ‘নায়িকার ভূমিকায়’ ছবির শ্যুটিংয়ে শেষ একসঙ্গে কাজ করেছিলেন দু’জনে। সারা রাত ধরে একটি গানের শ্যুটিং চলছিল। সেই জন্য সেটে বসে সারা রাত গল্প করেছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত আর অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। ফিরে এসেছিল একের পর এক পুরনো স্মৃতি। সেটি ছিল দু’জনে বসে একসঙ্গে শেষ স্মৃতিচারণ। এখন একা একা স্মৃতিচারণ।
ইন্দ্রাণী দত্তর সঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমসের তরফে যোগাযোগ করা হলে, প্রথমেই এই কথাটি বলেন তিনি। বলেন, ‘তাপসদার মৃত্যুর খবরটায় একদিন ঘুম ভেঙেছিল। আজ অভিষেকের খবরে ঘুম ভাঙল।’
প্রয়াত অভিনেতার বাড়িতে গিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। বললেন, ‘শতাব্দী রায় ফোন করে দিল্লি থেকে খবরটা দিল। বলল, এখনই যা।’ শেষ বারের মতো অভিষেককে দেখে বেরলেন ইন্দ্রাণী। দু’জনে একসঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করেছেন। কখনও নায়ক-নায়িকা হিসাবে। কখনও নায়ক-নায়িকা না হলেও এক ছবিতে ছিলেন।
‘কত ছবির নাম বলব? ‘অপমান’, ‘তুফান’, ‘পাপী’, ‘মিত্তির বাড়ির ছোট বউ’— তালিকাটা বিরাট। ছোটপর্দার একটি রিয়্যালিটি শোয়ে দু’জনে বিচারকের ভূমিকাতেও ছিলাম। হঠাৎ করে অভিষেক আজ পাশ থেকে সরে গেল। আর একসঙ্গে কাজের সুযোগ দিল না’, অভিমান তাঁর গলায়।
আরও একটি কারণে অভিমান আছে। বললেন, ‘শরীর খারাপ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। ও গেলই না। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনল। একটা সময়ে শরীর নিয়ে কত সচেতন ছিল! তার পরে গত কয়েক বছরে ওজন বাড়তে লাগল। সবাই বলেছিল, বিষয়টা নিয়ে গাফিলতি না করতে। রোজই বলত, হ্যাঁ, জিমে যেতে হবে, শরীরের খেয়াল রাখতে হবে। আর রাখলই না।’
আজ একা একা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কোন কথাগুলি বেশি করে মনে পড়ে?
ইন্দ্রাণী বলছেন, ‘তখন ‘দাবি’ বলে একটি ছবির শ্যুটিং করছি। গানের দৃশ্য। ডায়মন্ড হারবার রোডে শ্যুটিং। আমার বাইক চাপতে ভয় লাগে। একবার দুর্ঘটনা হয়েছিল, তার পর থেকেই ভয়। অভিষেককে বললাম, খুব ভয় করছে। ও বলল, আমি চালাচ্ছি তো ভরসা রাখো।’
এই একবারই নয়। আরও বহুবারই এমন ঘটেছে। ইন্দ্রাণীর কথায়, ‘সেবার শিলিগুড়ি গিয়েছি। ‘মিত্তির বাড়ির ছোট বউ’ ছবির শ্যুটিং। তিস্তা নদীর উপর গানের দৃশ্যের শ্যুটিং চলছে। একটা গোল পাথরের উপর আমি আর অভিষেক দাঁড়িয়ে আছি। পা পিছলে যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রচণ্ড হাওয়া। খুব শীত। দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না।’
সেই দৃশ্য শ্যুটিংয়ের সময়ে অনেক দূরে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাথরের আশপাশে কেউ নেই। পড়ে গেলে কেউ ধরে আসবে না। নির্ঘাত মৃত্যু! সেই অবস্থাতেও শ্যুটিং চালিয়ে যান ইন্দ্রাণী আর অভিষেক।
‘অভিষেক আমায় বলতে থাকে, মনে করো, তোমার শীত করছে না। এই ঠান্ডা হাওয়ায় তোমার আরাম লাগছে। আর তুমি পড়ে যাবে না। এই দেখো, আমি শক্ত করে তোমার হাত ধরে রেখেছি। বন্ধু, সহঅভিনেতা, সহশিল্পী অভিষেক শক্ত করে হাত ধরেছিল। ভরসা ছিল। আজ আচমকা সেই হাতটা ও ছেড়ে দিল। এই দুঃখ আমার কখনও যাবে না।’ বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে অভিনেত্রীর। প্রয়াত অভিনেতার বাড়িতে তাঁকে শেষ বারের মতো দেখে ইন্দ্রাণী ফিরে চলেছেন নিজের বাড়ির দিকে। অনেকটা অভিমান নিয়ে।