দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, সকলের প্রার্থনাকে বিফল করে চলে গেলেন 'জিয়ন কাঠি'-খ্যাত নায়িকা ঐন্দ্রিলা শর্মা। ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর। এরপরই তাঁকে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করা হয় অপারেশনও। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মাঝে কদিন সুস্থতার দিকে এগোলেও শেষ পর্যন্ত লড়াইটা হেরেই গেলেন 'ফাইটার' ঐন্দ্রিলা।
অনুরাগী থেকে পরিবার, কিংবা তাঁর সহকর্মীরা কেউই তাঁর এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। মাত্র ২৪ বছর বয়সে দারুন এক লড়াই করে থেমে গেলেন অভিনেত্রীর 'জীবন জ্যোতি'। ঐন্দ্রিলার ছোটবেলার বন্ধু পর্ণা বিশ্বাস কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর এই চল যাওয়া। আনন্দবাজারে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে এল অনেক অজানা কথা।
পর্ণা জানান, তিনি এবং ঐন্দ্রিলা বহরমপুরের সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর কাছে নাচ শিখতেন চয়নিকা নাচের স্কুলে। তিনি জানান অভিনেত্রীর ডাকনাম মিষ্টি। মিষ্টির চলে যাওয়ার কথা কিছুতেই মানতে পারছেন না পর্ণা, তাঁর কেবল অতীতের কথা মনে পড়ছে। তিনি জানান, 'আমরা দুজন স্যারের খুব প্রিয় ছিলাম। ঐন্দ্রিলা সবসময়ই ভীষণ পরিশ্রমী ছিল। সকালবেলা স্কুলে যেত, না সে টিউশন পড়ে নাচের ক্লাসে আসতে ঐন্দ্রিলা।' শুধুই কী তাই? তিনি জানান নাচের ক্লাসের মাঝে মাঝে অভিনেত্রী টিউশনের পড়া তৈরি করে রাখতেন। বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলেন ঐন্দ্রিলা। পর্ণার কথায়, 'পরীক্ষায় যদি ও ১০ এর মধ্যে ৯ পেত, তাহলেও বিরক্ত হতো ও। কম নম্বর পেলেই মাকে ফোন করে বলতো এটা পারিনি, ওটা পারিনি আমায় শিখিয়ে দেবে?'
ঐন্দ্রিলার স্মরণ শক্তি দারুন প্রখর ছিল বলেও জানান তাঁর বন্ধু। একটা নাচ নাকি খুব সহজেই রপ্ত করে নিতে পারত। 'ভীষণ ইতিবাচক মানসিকতার মেয়ে ছিল ঐন্দ্রিলা। বহরমপুরের মতো মফঃস্বল শহরে আমরা খুব ভেবে চিনতে পোশাক পরতাম যে কে কী ভাববে, ও বলতো আমার জীবন, আমার পোশাক। আমি পরব। মানুষের কথা মানুষ বলবে', এমনটাই নাকি ভাবতেন 'কুল' ঐন্দ্রিলা।
পর্ণা জানান, 'ওর যখন প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে, আমি খুব কষ্ট নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও ভীষণ পজিটিভ ছিল। ওর সঙ্গে কথা বলে আমার মন ভালো হয়ে গেছিল।' ঐন্দ্রিলা যে কতটা খাশিখুশি ছিলেন, আনন্দে থাকতে ভালোবাসতেন সেটাই পর্ণার কথা থেকে স্পষ্ট হয়।
ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়ার বিষয়ে উনি বলেন, 'ওর টানা কয়েক বছরের লড়াই শেষ হল। আর ভাবতে পারছি না যে কোনও আনন্দ উৎসবে এসে ও আমাকে জড়িয়ে ধরবে না।'
উল্লেখ্য ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অভিনেত্রীকে, মাঝে কদিন অভিনেত্রীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হলেও বুধবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ফের সংকটজনক হয়ে যায় তাঁর অবস্থা। কিন্তু তবুও লড়াই থামাননি। শুক্রবার তাঁর স্বাস্থ্যের খানিক উন্নতি হয়। কিন্তু শনিবার ফের তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।