দেখতে দেখেতে ৯টা দিন পার হয়ে গিয়েছে। মিষ্টিকে ছাড়া খাঁ খাঁ করছে কুদঘাটের অ্যাপার্টমেন্ট। সাজানো ঐন্দ্রিলার সারি সারি জুতো জোড়া, জামাকাপড় থেকে শুরু করে পছন্দের সব জিনিস। ছোট মেয়ের মৃত্যুর ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি ঐন্দ্রিলার পরিবার। ঐন্দ্রিলার স্মৃতি আঁকড়েই কাটছে তাঁর মা-বাবা-দিদির দিন। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন সব্যসাচী। তবে অভিনেত্রীর দিদি এবং মা মনের যন্ত্রণা উজার করে দিচ্ছেন ফেসবুকে।
ভালো নেই ঐন্দ্রিলার পরিবার। মেয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই এখন কেঁদে ফেলছেন তাঁর মা। শোক কাটিয়ে উঠে এখন মেয়ের জন্য কিছু করে উঠতে পারেননি তাঁরা, তবে মঙ্গলবার ঐন্দ্রিলার শহর বহরমপুরে তাঁর স্মৃতিতে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এক সংবাদমাধ্যমকে ঐন্দ্রিলার বাবা উত্তম শর্মা জানান, ‘আমরা একে-অপরকে সামলানোর চেষ্টা করছি মাত্র।’ এখানেই শেষ নয়, টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চেই সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। এই ব্যাপারে ফোনে সব্যসাচীর বাবার সঙ্গে কথাও হয়েছিল তাঁদের। পাকা দেখা-র জন্য শীঘ্রই ঐন্দ্রিলার বাড়িতে আসবার কথা ছিল।
ঐন্দ্রিলার মা জানান, ‘কত্ত কিছুই তো পরিকল্পনা ছিল। সব্য আর আমার মিষ্টি হরিহর আত্মা। সবাই বলে চলেছে ঐন্দ্রিলা ছিল…. এর মধ্যেই সব অতীত হয়ে গেল।’ কান্নায় গলা ধরে আসে তাঁর। শিখা দেবীর কথায়, ‘ঐন্দ্রিলা ছিল আমার পরিবারের মেরুদণ্ড’। আপতত বড় মেয়ে ঐশ্বর্য আর ঐন্দ্রিলার স্মৃতি আগলেই দিন কাটছে তাঁদের।
২০১৭ সালে ঝুমুর সিরিয়ালের সেটে আলাপ সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলার। সেখানেই শুরু এই প্রেমের গল্প। কঠিন পরিস্থিতিতে ঐন্দ্রিলা ও তাঁর পরিবারের পাশে সবসময় থেকেছেন সব্যসাচী। যতরকমভাবে একটা মানুষকে আগলে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করেছেন তিনি। যদিও শেষমেশ গত ২০শে নভেম্বর সব্যসাচীর হাতটা চিরকালের মতো ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। বিদায়বেলায় ঐন্দ্রিলার পায়ে সব্যসাচীর মাথা ঠেকানোর দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে!
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের জন্য ঐন্দ্রিলার শরীরে ফিরে এসেছিল মারণরোগ ক্যানসার। সেই সময় অসম্ভব মনের জোর আর সব্যসাচীর ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়েই দ্বিতীয়বার ক্যানসার জয়ী হন ঐন্দ্রিলা। এরপর ভালোই কাটছিল সময়। সুস্থ হয়ে কাজেও ফেরেন ঐন্দ্রিলা। ‘ইউয়িং সারকোমা’-র রোগী ছিলেন ঐন্দ্রিলা। এই টাইপের ক্যানসার সহজে পিছু ছাড়ে না। চিকিৎসকদের ধারণা ক্যানসার রিভাইভ করেছিল ঐন্দ্রিলার শরীরে, তা আচমকা মাথায় ছড়িয়ে যাওয়াতেই গত ১লা নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। এরপর কোমায় চলে যান অভিনেত্রী। দীর্ঘ টানাপোড়েনর পর গত ২০শে নভেম্বর দুপুরে মৃত্যু হয় ঐন্দ্রিলা শর্মার।