স্বঘোষিত‘ভগবান’শ্রী রজনীশ। ওরফে, ‘সেক্স গুরু’ ওশো। অপার যৌনতাই ছিল যাঁর কাছে মুক্তির মূলমন্ত্র। কোনওরকম রাখঢাকে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না বরং জোরগলায় বলতেন ‘আই অ্যাম আ স্পিরিচুয়াল প্লেবয়! ইজ দেয়ার সামথিং রং?’
‘সম্ভোগ সে সমাধি’। অর্থাৎ যৌনমিলনই মোক্ষলাভের মোক্ষম পথ, এই বুলি দিয়েই সত্তরের দশকে গোটা পৃথিবীতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের চন্দ্রমোহন জৈন, যাকে বিশ্ব চেনে ‘ওশো’ বলে।
সত্তরের দশকে এই ধর্মগুরুর জনপ্রিয়তা ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছিল বলিউডের অন্দরে। পারভিন ববি থেকে মহেশ ভাট তথা বিনোদ খান্নাও আকৃষ্ট হন ওশোর বাণীতে। আজ প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা বিনোদ খান্নার ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে ভাইরাল তাঁর পুত্র অক্ষয় খান্নার এক পুরোনো এক সাক্ষাত্কার। যেখানে তাঁদের গোটা পরিবারের উপর ওশোর প্রভার নিয়ে মন খুলে কথা বলেছেন অক্ষয়।
১৯৭৫ সালে ওশোর শিষ্য হিসাবে দীক্ষা নেন বিনোদ খান্না।এরপর নিজের কেরিয়ার, পরিবার সবকিছুকে বিদায় জানিয়ে চলে যান মার্কিন মুলুকের ওরেগনে। যেখানে গড়ে উঠেছিল ওশোর নতুন আশ্রম ‘রজনীশপুরম’। সেই সময় সবে হাঁটতে শিখছে বিনোদ খান্নার বড় ছেলে অক্ষয়। কেন বাবা আচমকা তাঁদের ছেড়ে চলে গেল? এই প্রশ্নে গোটা ছেলেবেলা জুড়ে তাড়া করে বেরিয়েছে অক্ষয় ও তাঁর ভাই রাহুল খান্নাকে। পরবর্তী সময়ে যখন অক্ষয়ের বয়স ১৫-১৬ তখনই ওশো তথা স্বঘোষিত‘ভগবান’শ্রী রজনীশ সম্পর্কে প্রথম সবটা জানতে পারেন অক্ষয়।
জানুয়ারি মাসে মিড-ডে’কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বিনোদ খান্নার পরিবারের উপর ওশোর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অক্ষয় জানান, ‘এই প্রভাবের জেরে শুধু পরিবারকে ছেড়়ে যাওয়াই নয় বরং সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন তিনি।সন্ন্যাসের অর্থ হল পুরোপুরিভাবে নিজের সামাজিক জীবনের পরিত্যাগ করা, পরিবার তার একটা অংশ মাত্র। এটা একটা জীবন বদলে দেওয়া সিদ্ধান্ত ছিল।ওঁনার কাছে সেইসময় ওটা জরুরি সিদ্ধান্ত ছিল, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ওই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব বা কারণ বোঝা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। আজ বুঝতে পারি’।
অক্ষয় যোগ করেন, হয়ত ওঁনার ভিতরে এমনকিছু একটা ঘটেছিল যা পুরোপুরিভাবে তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। হয়ত সেই কারণেই উনি ওইরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ জীবনে সেইসময় ওঁনার কাছে সবকিছু ছিল। হয়ত অনেক বেশি কিছুই ছিল। আসলে অন্তরের ভিতর কোনও ভূমিকম্প না হলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অসম্ভব। তবে আরও কঠিন সেই সিদ্ধান্তে ঠিকে থাকা, এটা আর ভালো লাগছে না- চলো ফিরে যাই, এমনটা নয়’।
অক্ষয় সাফ জানান, অনেকে যেমনটা ভাবেন রজনীশের আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে দেশে ফিরে আসেননি বিনোদ খান্না। বরং মার্কিন সরকাক ওশো ও তাঁর অনুগামীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল, তারপরেই বিনোদ খান্না দেশে ফেরেন। তবে এতকিছু সত্ত্বেও ওশোর প্রতি কোনওরকম ক্ষোভ নেই অক্ষয়ের মনে বরং তিনি শ্রদ্ধা করেন তাঁর বাণীকে।
২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল ৭০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় বিনোদ খান্নার। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর মারণরোগ ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলেন বিনোদ খান্না। ১৯৬৮ সালে মন কা মিত ছবির সঙ্গে বলিউড ডেব্যিউ হয়েছিল বিনোদ খান্নার, হিরো হিসাবে আত্মপ্রকাশ তিন বছর পর ‘হাম তুম অউর ওহ’ ছবির সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে বিজেপির নেতা হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু তাঁর, অটল সরকারের মন্ত্রী হিসাবেও কাজ করেছেন বিনোদ খান্না।