সালটা ২০০০, সেসময় নিজের কেরিয়ারে সেরা পর্যায়ে ছিলেন অলকা ইয়াগনিক। সেবছর অলকার কাছে এসেছিল অভিষেক বচ্চন ও করিনা কাপুরের প্রথম ছবি 'রিফিউজি'-তে গান গাওয়ার প্রস্তাব। সেসময় নিজের বাবাকে হারিয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অলকা। কারণ হিসাবে সেসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী। তবে পরে সে মনখারাপ কাটিয়ে আবারও সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন অলকা ইয়াগনিক।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অলকা জানান, ‘যখন রিফিউজির গান রেকর্ড করা হয়েছিল, তখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি আমার বাবাকে হারিয়েছিলাম, এবং আমি আমার পরিবারে আমার বাবার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলাম। আমার বাবা মারা যান মাত্র ৫৮ বছর বয়সে। তারপর বছর দু’য়েক আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে কাটিয়েছি। ডিপ্রেশনের মধ্যে কাটাচ্ছিলাম, ঠিক করেছিলাম আমি গান গাইব না, রেকর্ড করব না, আমি বাইরে যাব না। নিজেকে আমার ঘরে বন্ধ করে রাখতাম, আমার মা, আমার ভাই, আমার বন্ধু... সায়েশাও (সায়েশা কাপুর, অলকার মেয়ে)তখন খুব ছোট ছিল। সায়েশা বলত 'মামা সব ঠিক হো যায়েগা (মা, সব ঠিক হয়ে যাবে)। আমি বিরক্ত হতাম, ভাবতাম কেন আমার বিরক্ত করা হচ্ছে।
অলকা বলেন, 'গান রেকর্ডিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রচুর ফোন আসত। আমি আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম 'আমি রেকর্ড করতে চাই না'। মা আমাকে বলতেন 'এমন কাজ করো না, বাড়ির বাইরে বের হও। তুমি ঠিক সামলাতে পারবে। নিজের মন থেকে এই বিষণ্ণতা কাটাও।' তারপর একবার একদিন অনু মালিক ফোন করেন, জেপি দত্ত এই ছবিতে কাজ করছেন - অভিষেক এবং কারিনার লঞ্চ। তোমায় গানটা গাইতেই হবে।' মুখের উপর বলেছিলাম, 'আমি পারব না। তখন অনু মালিক আমার বাড়িতে এসে ধর্নায় বসে যান। বললেন, 'তোমাকে গান রেকর্ড করতেই হবে, না করলে আমি (অনুজি) এটাতে কাজই করব না।'। আমি বলেছিলাম আর গান গাইতে চাই না। তখন তিনি একপ্রকার আমার হাত ধরে স্টুডিওতে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন।'
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সঙ্গীতের জগতে তাঁর অসামান্য অবদান অলকা ইয়াগনিকের। তাঁর গলার মিষ্টি সুর, মন কেড়েছে আট থেকে আশির। উল্লেখ্য, কলকাতায় জন্ম গায়িকার। ১০ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে মুম্বই পাড়ি দেন ছোট্ট অলকা। সর্বাধিক সাফল্য পেয়েছেন হিন্দি সিনেমার গানে। তাঁর সবথেকে জনপ্রিয় গানগুলি মধ্যে হল- ‘লাল দোপাট্টা’, ‘দিল লাগা লিয়া’, ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’, ‘কাভি আলভিদা না কেহনা’ প্রমুখ। ১৯৮৯ সালে শিলং-এর ব্য়বসায়ী নীরজ কাপুরের সঙ্গে বিয়ে হয় অলকার। তাঁদের একটি মেয়েও আছে। মাঝে চার-পাঁচ বছরের জন্য় আলাদা থাকতেন, ফের একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তাঁরা।