রাজস্থানের উদয়পুরে দরজির মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। পয়গম্বর নিয়ে মন্তব্যে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বক্তব্য সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন কানহাইয়া লাল নামের এক দরজি। এরপরই তাঁর দোকানে ঢুকে তাঁকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে দুই আততায়ী। ঘটনার ভিডিয়ো তুলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তারা।
এই ভয়ংকর ঘটনায় স্তম্ভিত সকলে। ওই দুই আততায়ীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করেন, এই হত্যা 'ইসলামের অবমাননার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য' এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। নূপুর শর্মার মুণ্ডচ্ছেদেরও হুমকি দেয় দুই হত্যাকারী।
ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন উরফি জাভেদ। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কোনদিকে এগোচ্ছি? আল্লাহ তোমাকে তাঁর নামে ঘৃণা ও হত্যা করতে বলেননি।’
এরপর একটি দীর্ঘ পোস্টে উরফির মন্তব্য, ‘মানুষ তাদের ধর্ম ও দেবতাদের (কাল্পনিক বন্ধু) নামে ঘৃণা ও হত্যা চালায়। সত্যিই কী এমনটা। কেন আমরা শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, ধর্ষণের জন্য ফাস্ট ট্র্যাক মামলা, জিডিপি নিয়ে কথা বলছি না। ধর্মগুলি তৈরি করা হয়েছিল যেন মানুষের নৈতিক ও নীতিবোধ থাকে।’

উরফি আরও লিখেছেন, ‘এখনকার সময় দাঁড়িয়ে আপনার ধর্ম আপনার নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কেড়ে নিচ্ছে। মানবসৃষ্ট যে কোনও বিশ্বাসে-চরমপন্থা ধর্মগুলির ধ্বংসের কারণ হবে! দেরি করা উচিত নয়। চোখ খুলুন! আমি জানি চরমপন্থীদের থেকে এরপর আমি অনেক ঘৃণার সম্মুখীন হব।’
শুধু উরফি নয়, এই হত্যার নিন্দা করেছেন অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যও। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘সন্ত্রাস চরমে। উদযাপন করা আরও ঘৃণ্য এবং অগ্রহণযোগ্য। #UdaipurHorror।’
অপর টুইটে তিনি লেখেন, ‘শান্তি ছড়ানোর দূতের কাছে অশান্তি ছড়ানোর হাতিয়ার? এটা কি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি শান্তিপ্রিয় প্রাণীদের জন্য এই অস্ত্র রাখা স্বাভাবিক? #UdaipurHorror.’

গত ১৭ জুন কানাহাইয়া লালকে খুনের হুমকি দিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ করে এক অভিযুক্ত রিয়াজ আটারি। সেই ভিডিয়োটি ফেসবুক এবং উদয়পুরের বিভিন্ন হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। ‘লাইভ হিন্দুস্তান’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কানাহাইয়া লাল। পুলিশি নিরাপত্তা চেয়েছিলেন।
হুমকি পাওয়ার পর ছয়দিন দোকানও খোলেননি। মঙ্গলবারই প্রথম দোকান খুলেছিলেন। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ধানমণ্ডি এলাকার ওই দরজির দোকানে ঢোকে অভিযুক্ত দুই যুবক মহম্মদ রিয়াজ আখতার ও মহম্মদ গোশ। শুরুতে নিহত দরজির কাছে জামার মাপ দেয়। এরপরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তির মাথায় ও গলায় আঘাত করে। তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।