আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্য তোলপাড়। চারিদিকে বিদ্রোহের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় হাসপাতালের সেমিনার রুমে নারকীয় বর্বরতার শিকার আর জি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী! যৌন নির্যাতন চালিয়ে খুন করা হয় ওই তরুণীকে। এই ঘটনার জেরে শহরের রাস্তায় নাগরিক মিছিল, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে প্রতিবাদের হিড়িক। আরও পড়ুন-‘চটিচাটা বুদ্ধিজীবী' অপর্ণাকে গো-ব্য়াক স্লোগান! ‘সিভিক পুলিশেই লুকানো নষ্টামির বীজ’, বললেন অভিনেত্রী
রাত পেরোলেই ১৪ই অগস্ট। আর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ অভিযান চলবে গোটা বাংলা জুড়ে। এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুনও। তবে টেলি অভিনেত্রী ও নাট্যকর্মীর এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। সেখানে সকল পুরুষকে ‘সম্ভাব্য রেপিস্ট’ বলে দেগে দেন এই 'নারীবাদী' অভিনেত্রী।
মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি লিঙ্ক শেয়ার করে গুলশনারা লেখেন, ‘হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি ‘পুরুষ মানেই সম্ভাব্য ধর্ষক’… আমি আবার বলছি… চিৎকার করে বলছি…চাইলে আমাকে আনফ্রেন্ড করতে দ্বিধা বোধ করবেন না।’ এরপর তিন যোগ করেন,'অবধারিতভাবেই আমি ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছি আর ‘ভালো বন্ধু’দের থেকে ফোনও পাচ্ছি। ধর্ষক মানেই পুরুষ। ‘পুরুষ’ হলে ধর্ষক নন।'
যদিও গুলশানারার এই পুরুষ-বিদ্বেষী মনোভাবের সঙ্গে সহতম নয় অধিকাংশই। টলিপাড়ার অনেকে খোলাখুলি এর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। কারণ ‘অভয়া’কে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে শুধু তাঁর মহিলা সহকর্মীরাই নয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাচ্ছে পুরুষরাও।
অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা তুমি তোমার কোনও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলছ। কিন্তু এ ভাবে তুমি বলতে পারো না। তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ নিম ফুলের মধু খ্যাত বড় জেঠি অর্থাৎ তনুশ্রী গোস্বামী লিখেছেন, 'কথাটা গায়ে নিলাম। নিজের বাবার কথা মনে হল। তোর বাবার কথাও মনে হল। ওঁকে নিয়ে তোর লেখাও পড়েছিলাম। কোথাও তো এ রকম মনে হয়নি। কী জানি হয়তো কিছু আছে। যা-ই হোক, তোর অভিনয়ের ভক্ত আমি। ওটুকুই থাক। আমরা এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করি। সেটুকু শ্রদ্ধা রেখে চলব। আর যে হেতু তুই তোর বক্তব্য পছন্দ না হলে আনফ্রেন্ড করতে বলেছিস, তাই সেটাই করলাম। ভাল থাকিস।’
অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় লেখেন- ‘এটা ঠিক বললে না.. এর অনেক ব্যাখ্যা আছে.. মানসিক কোরো না বিষয়টা। আমরা সবাই ট্রমাতেই আছি জানি.. তবুও। গাছের গোড়ায় অসুখ করেছে আর আগায় ওষুধ দিলে কিছুই হবে না শেষ পর্যন্ত।’ জবাবে গুলশনারা লেখেন- ‘ছোট থেকে বাবার বন্ধু থেকে শুরু করে এত লোক গায়ে হাত মেরেছে যে এটা আমার বিশ্বাস। যাই হোক আমি কোনও তর্কে জড়াতে চাই না’। তবুও মহিলাও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘ধর্ষক মহিলাও হয়, সেটাও ভয়ানক কিন্তু... তোমার কথার বিরোধিতা করছি..’।
মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি কর মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে। বুধবারই শহরে আসছে কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। সঞ্জয় রায় কি প্রকৃত দোষী? সে কি একাই এই নৃশংস ঘটনার পিছনে রয়েছে? ধর্ষণের ছক কি আগেই কষা হয়েছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে নির্যাতিতার পরিবার-সহ গোটা বাংলা।