বলিপাড়ায় যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিল না অমিতাভ বচ্চনের জন্য। আশির দশকে খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন 'শাহেনশাহ'-র ব্যক্তিগত জীবনে বিরাট সব বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল। তার মধ্যে মৃত্যুর দোরগোড়ায় দিয়ে ফিরে আসা থেকে শুরু করে ছিল হাতের ওপর দিয়ে যাওয়া বিরাট দুর্ঘটনা। বাঁ হাতের পাঞ্জাটাই প্রায় উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল! সেটা ছিল ৮৩'র দীপাবলীর রাত। দিল্লির গুলমোহর পার্কার বাড়িতে দীপাবলী উদযাপন করতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বাঁ হাতে একটা তুবড়ি ফেটে গিয়েছিল। হাতের পাঞ্জার ছাল-চামড়া-মাংস খসে পড়েছিল। কোনওরকমে রক্ষা পেয়েছিল আঙ্গুলগুলো। 'বিগ বি'-র কথায়, 'কীভাবে পেয়েছিল, জানি না'। তখন 'পুকার' ও 'কুলি'-র রিলিজ হওয়ার সময়। ফ্লোরে ছিল 'ইনকিলাব'। আর সদ্য তোড়জোড় করে শুরু হয়েছিল 'শরাবি'-র কাজ। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে ওই হাত নিয়েই কাজ শুরু করেছিলেন অমিতাভ। শ্যুটিংয়ে ক্যামেরার সামনে হাতের ক্ষত আড়াল করতে কিছু অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন বলি-তারকা।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অমিতাভ একবার জানিয়েছিলেন সেই সময় তাঁর হাতের অবস্থা যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ ছিল। আঙুলগুলোয় হাড়ের ওপর মাংস-চামড়া কিস্যু নেই। স্কিন গ্র্যাফটিং করতে হয়েছিল। অভিনেত্রী উরু থেকে সেই চামড়া নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর বহুদিন হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে নাড়াতে পর্যন্ত পারতেন না অমিতাভ। শক্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেকগুলো ব্যায়াম ছিল রোজকার রুটিনে। সেগুলো করতে করতেই আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালন করা শুরু করে তাঁর। যদিও এই ব্যাপারে এর থেকে বেশি কথা আর কখনও বলেননি 'মর্দ'-এর নায়ক। তবে সেইসময়ে তীব্র হতাশা যে তাঁকে গ্রাস করেছিল তা জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে এর মধ্যেই শ্যুটিং শুরু করেছিলেন তিনি। হাতের সেই ক্ষত আড়াল করতে কখনও 'ইনকিলাব' এর শ্যুটিংয়ে হাতে রুমাল বেঁধে ক্যামেরার সামনে থেকে আসা শুরু করে ' 'শরাবি'-র প্রচুর সিকোয়েন্স পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে রাখতে দেখা গেছিল 'বিগ বি'-কে। দর্শকদের কাছে সেসবই অবশ্য নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট হিসেবে গৃহীত হয়ে গেছিল!
গত বছর এই ঘটনার স্মৃতিতে একটি অর্থবহ পোস্টও করেছিলেন অমিতাভ। টুইট করে নিজের হতে পান্জারচায় দিয়ে অমিতাভ লিখেছিলেন, 'মানুষের শরীরে আঙ্গুল একবার ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাঁকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দারুণ এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। সারাক্ষণ সঞ্চালনা করতে হয় অথচ তা করা বন্ধ হলেই ধীরে ধীরে সাড় চলে যায় আঙুলের। জমাট ধরে যায়। আমার থেকে ভালো আর কে জানে। হাতে তুবড়ি ফেটে যাওয়ার সেই দুর্ঘটনার পরে মধ্যমার কাছাকাছি একই হাতের বুড়ো আঙুলটি আনতে আমার সময় লেগেছিল দু'মাসেরও বেশি। অথচ এখন সেই হাতের আঙ্গুলই কত কিছু করে বেড়ায়'।