ছোট পর্দা হোক বা বড় পর্দা কিংবা ওয়েব মাধ্যম, সর্বত্রই তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন। একের পর দারুণ সব কাজ উপহার দিয়েছেন। দিচ্ছেন। কিন্তু একটা সময় এই অভিনেতাই মাদকাসক্তির শিকার ছিলেন। একাধিকবার অকপটে জানিয়েছেন সেই কথা। তবে এদিন তাঁর নেশামুক্তির ১৭ বছর পূর্ণ হতে লিখলেন একটি আবেগঘন বার্তা।
কী লিখলেন অনিন্দ্য?
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এদিন তাঁর ফেসবুকের একটি পোস্টে লেখেন তাঁর বায়োলজিক্যাল জন্মদিন যতই ডিসেম্বর মাসে হোক আজকের দিনটা অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি তাঁর আসল জন্মদিন। এবং বিশেষ দিন। কারণ এই দিনেই তাঁর নেশামুক্তি ঘটেছিল। এরপর কেটে গিয়েছে ১৭ বছর। কিন্তু লড়াইটা কেমন ছিল, এখনই বা কেমন আছেন সেটাই তিনি এদিন তাঁর পোস্টে তুলে ধরেন।
অনিন্দ্য এদিন গান ওয়েস্ট লেখেন, 'কালকে ২৩শে জানুয়ারি। আমার জন্মদিন। এই জন্মদিনটাই আমার সবচেয়ে কাছের। কেন? কারণ কালকে আমার নেশামুক্তির ১৭ বছর। ২৯শে ডিসেম্বর তো বায়োলজিক্যাল বার্থডে। কিন্ত কালকের দিনটা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি স্পেশাল। আমার কাছে এখনও জলের মতো স্পষ্ট ২০০৮ সালে আজকের এই দিনটা। আর দেখতে পাই বলেই হয়তো আজকে এটা লিখতে পারছি। ব্যাঙ্কসাল কোর্টে হাজিরা দিয়ে আমাকে রিহ্যাবে ফিরতেই হতো, ৯টার বনগাঁ লোকাল আর আমাকে যেতে হত হাবড়া। সাথে ছিল শেষবারের মতন নেশা করব বলে একটু ব্রাউন সুগার, পাতি বাংলায় কয়েকটা পাতা আর একটা সিরিঞ্জ, একটু তুলো একটা চামচ। হাবড়া স্টেশনে নেমে একটু এগোলেই সেই রিহ্যাব যেখান থেকে আমার ভালো থাকার লড়াই শুরু হয়েছিল। তার আগে প্রায় ২৮ বা ২৯ টা ডিটক্স আর রিহ্যাব হয়ে গেছে । যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস, এরম একটা প্যাটার্ন ছিল। ৬/৭ বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত। নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি। তালা চাবির বাইরে বেরোলেই আবার নেশা। না নিজে বিশ্বাস করতাম যে আমি কোনদিন ভালো হতে পারব, না আমাকে কেউ বিশ্বাস করত যে আমি কোনদিন নেশা ছেড়ে দেব। উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের আর কতই বা ক্ষমতা? বাড়ির সব কিছুই মোটামুটি ততদিনে প্রায় শেষ!' তিনি এদিন আরও লেখেন, 'মায়ের সোনার গয়না হোক বা বাবার সঞ্চয়, এরপরে বাইরের লটরবহর তো আছেই। লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতোই দামী। যে কোনও গাড়ির লক খুলতে লাগতো ঠিক তিন মিনিট। একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ক্যাশ ২/৩ হাজার। সেটাই অনেক তখন আমার কাছে, এরম একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারব না আর চোখের সামনে চারটে ইউজিং পার্টনারকে পরপর মরতে দেখে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। এতটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম যে আমার সেই রিহ্যাবে যাওয়া আর সেখানে আবার কয়েকমাস চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না।'
অভিনেতা এদিন আরও বলেন, 'আর এই উপলব্ধিটাই আমাকে একটু হলেও সাহস জুগিয়ে ছিল। এভাবেই আমার ভালো থাকার শুরু । শুরুটা সত্যি কঠিন ছিল। না কেউ বিশ্বাস করতো, না নিজে বিশ্বাস করতাম যে নেশা করা ছেড়ে দেব। আজকে যখন রাস্তায় লোকে সেলফি তুলতে চায়, অটোগ্রাফ চায়, ভালোবাসা দেয় তখন আমি নিজেকে দেখি আর পুরোটাই কেমন স্বপ্নের মতন লাগে। আদৌ এটা সত্যি হচ্ছে তো? কোথায় সেই ছেলেটা আর কোথায় আজকের আমি! আমার লড়াই সেই বাঁদরটার সাথে যে আজকেও আমার মধ্যে আছে। যাকে আমাকে প্রতিনিয়ত বশে রাখতে হয়।' তিনি জানান তাঁর বাবা মা তাঁর এই বদল, সফলতা দেখে গেছেন, বোন গর্ব করেন আজ তাঁকে নিয়ে। এটুকুই চেয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি উচ্চারণে হিন্দি বলছে সইফের হামলাকারী, জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে সমস্যায় পুলিশ!
বলাই বাহুল্য তাঁর এই কথায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর বন্ধু মিমি চক্রবর্তী লেখেন, 'তোকে নিয়ে গর্বিত।' আরেকজন লেখেন, 'অনেক মানুষকে সাহস জোগালে। চাইলে সত্যিই পারা যায় সব।' তৃতীয় ব্যক্তি লেখেন, 'ভালো থাকুন। আর যাঁরা এই পথে হেঁটেছেন বা হাঁটছেন তাঁদের সুমতি হোক।'