হিজাব বিরোধী প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে ইরান। সরকারের বেঁধে দেওয়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে গত তিন মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন ইরানের মেয়েরা।
মেয়েদের নিয়ে ইরানের প্রশাসনের গোঁড়া মানসিকতার বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন হাজার হাজার ইরানি মহিলা। হিজাব ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিকে ইরানি কর্তৃপক্ষ দেশটির অন্যতম বিখ্যাত অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তিকে গ্রেফতার করেছে। সমাজমাধ্যমে এই পোস্টের কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
IRNA-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্কার জয়ী সিনেমা ‘দ্য সেলসম্যান’ অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি প্রতিবাদের মূল স্লোগান লেখা কাগজ হাতে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। লেখা আছে 'নারী, জীবন, স্বাধীনতা'। এই স্লোগানটি ইরানের নারীরা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এই ছবিতে হিজাব পরেননি অভিনেত্রী। ইরানে এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী সেলেবদেরও ছেড়ে কথা বলছে না প্রশাসন।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে একমাত্র বাংলাদেশি সিনেমা, কিফে প্রদর্শিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’
বছর ৩৮-এর অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি পোস্টে লিখেছেন, ‘এই নৃশংসতা যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দেখেও মুখ বুজে রয়েছে, তারা প্রত্যেকে মানবতার নামে লজ্জা।’ অভিনেত্রীর এই পোস্টটিতে এক মিলিয়নেরও বেশি লাইক পড়েছে। তাঁর ফলোয়ার্স সংখ্যা ছিল ৪ মিলিয়নের বেশি। তারানেহ আলিদুস্তির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অভিনেত্রী আলিদুস্তি জন্ম ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন তিনি। প্রথম সিনেমার জন্য ২০০২ সালে লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রোঞ্জ লেপার্ড পুরস্কার পান। এখনও পর্যন্ত ১৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ৮টি বড় মাপের পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। 'দ্য সেলসম্যান' ছবির জন্য ২০১৬ সালে অস্কার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
ঘটনার শুরু গত ১৬ সেপ্টেম্বর। পোশাকবিধি না মানায় ইরানের রাজধানী তেহরানে এক তরুণী— মাহাসা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের এই নীতিপুলিশের দল। হেফাজতে থাকাকালীনই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আগুনের গতিতে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইরানের পথে।
ইরানে হিজাব বিরোধী প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেদেশের বহু অভিনেতা, গায়ক গায়িকারাও গর্জে উঠেছেন। নভেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করায় আরও দুই বিখ্যাত অভিনেত্রী হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি এবং কাতায়ুন রিয়াহিকেও গ্রেফতার করেছিল কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে এক ইরানি ফুটবলার ভোরিয়া ঘাফুরিকেও করা হয়েছিল। তবে তিনজনকেই এখন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।