ভালোবাসা হয়ত সব প্রতিবন্ধকতাকেই জয় করে নিতে পারে। আর তারই আরও একবার প্রমাণ মিলেছে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যের দাদার বিয়ের অনুষ্ঠানে। বহু বাধা পার করে সম্প্রতি পঞ্চাশোর্ধ্ব দাদার বিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। পাত্রী তাঁর দিদিমা ও মায়ের পছন্দ করে যাওয়া এবং দাদারও পছন্দের 'রানিদিদি'। যিনি কিনা মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে জেনেও তাঁর দাদাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছিলেন বহুদিন। আজ সেই 'রানিদিদি' ও দাদার সম্মতিতে অবশেষে বহুদিনের প্রতীক্ষিত সেই বিয়েটা হয়েছে।
অভিনেত্রী পরাজিতা আঢ্যের মা আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাঁদের হাওড়ায় পুরনো সেই বাড়িতে, অভিনেত্রীর মায়ের ইচ্ছেমত, তাঁরই ঘরে আয়োজন করা হয় অপরাজিতার দাদা ও রানিদিদির বিয়ের। সেই খুশির অনুষ্ঠানের নানান মুহূর্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি অভিনেত্রী। তবে অপরাজিতার দাদার সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের এক টুকরো মুহূর্ত উঠে এল অন্য এক ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। যেখানে দাদা-বউদির মালাবদলের মুহূর্তে হাসিখুশি ধরা পড়েছেন অপরাজিতা আঢ্য। নাচতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। দেখা যাচ্ছে, মালাবদলের সময় মহিলারা ছড়া কাটছেন, সেখানে 'হাঁটুর নিচে দুলছে খুকুর গোছা ভরা চুল' (পরিচিত ছড়ার লাইন) বলতে বলতে নাচতে দেখা যাচ্ছে অপরাজিতাকে।
আরও পড়ুন-দেবযানীকে নাম না করে আক্রমণ! ধর্মাচরণ ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে কী লিখলেন ঋষি কৌশিক?
এদিকে সম্প্রতি দাদাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ইমোশনাল ভিডিয়ো পোস্ট করেন অপরাজিতা আঢ্য। সেখানে দাদার বিয়ে দেওয়া নিয়ে যেসমস্ত নেটিজেন তাঁর প্রশংসা করেছেন, বাহবা দিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি অপরাজিতা। আবার যাঁরা তাঁর শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ পঞ্চাশোর্ধ দাদাকে বরবেশে দেখে নাক সিঁটকেছেন, তাঁদেরকেও উচিত জবাব দিতে ছাড়েননি অভিনেত্রী।
চিরকালই স্পষ্ট বক্তা অপরাজিতা ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, 'এতদিনে কেন বিয়ে হল না দাদার? অনেকের এটা প্রশ্ন। ওঁনাকে (দাদার স্ত্রীকে) আমার দিদিমা পছন্দ করে গিয়েছিলেন। দিদিমা চেয়েছিলেন ওর সঙ্গে দাদার বিয়েটা হোক। ও (অপরাজিতার বৌদি) সারাক্ষণ দিদার সঙ্গে থাকত। দিদিমা মারা যান, সেটা ২০১১ সাল। সেইসময় ওই দিদির সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব হয়নি। আমাদের পরিবারে কিছু অসুবিধা ছিল, ওর তো ভাই মারা যায়। তাঁকে গোটা সংসারের হাল দিদিকে ধরতে হয়েছিল।’
অপরাজিতা আরও বলেন, ‘আমার দাদার শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা আছে। সেটার সঙ্গে উনি লড়াই করেন, অনেক ওষুধ চলে। উনি সরল-সাধাসিধে মানুষ, এলাকায় অনেক মানুষ ওকে হাসির পাত্র বানানোর চেষ্টা করে। ওর কিছু হবে না, এইসব বলে। আমি এই ধরণের মানুষকে ঘৃণা করি। এটা আমার দাদার সঙ্গে হামেশা ঘটে, গতকালও ঘটেছে ওর বিয়ের পর। এটা অত্যন্ত কদর্য মনের পরিচয় দেয়। কারুর ভালোতে যদি আপনি খুশি না হন, তাহলে আপনি ঘৃণ্য মনের পরিচয় দিয়েছেন।’
অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য আরও জানান, ‘রানিদিদির সেবা যত্নেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন অপরাজিতার দাদা। শেষ দু-বছর শয্যাশায়ী ছিলেন অপরাজিতার মা। তাঁরও সেবা করেছেন এই রানিদিদি।’ আর সেকারণে পাত্র-পাত্রী দুজনের ইচ্ছেতেই এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।