রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে 'মস্করা' করেছেন গোবিন্দার বোনপো ক্রুষ্ণা অভিষেক। নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ নিয়ে শুক্রবার ফেসবুকে গর্জে উঠেন কবি-গীতিকার-পরিচালক শ্রীজাত। সেই নিয়ে রীতিমতো হইচই কাণ্ড। শ্রীজাত সমর্থনে সুর চড়ান সৃজিত, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তরা। ‘একলা চলো রে’ গানটি নিয়ে অশালীন ঠাট্টায় ক্ষুব্ধ হন শ্রীজাত, কাজলের মতো বাঙালি অভিনেত্রী সেই ‘মস্করা’য় হেসে গড়িয়ে পড়ায় মর্মাহত কবি।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের অপমান, কপিল শর্মার শো নিয়ে শ্রীজাতর প্রতিবাদেের মাঝেই উলটো সুর অভিনেত্রী-পরিচালক অপরাজিতা ঘোষের গলায়। ফেসবুকে তাঁর সটান প্রশ্ন, ‘রবীন্দ্রনাথ কি আমাদের বাবার সম্পত্তি! এই বঙ্গে কবিকে নিয়ে ঠাট্টা করার অনুমতি রয়েছে! রাজ্য বদলাতে তখন সেটা অপমান এবং অপরাধ হয়ে যায়’।
অপরাজিতা বলেন, ‘মীরাক্কেলে তো ভেঙে মোর ঘরের চাবিটাকে চোদ্দটা বাজিয়ে দিত মীর! সেখানে ‘ভেঙে মোর ঘরের তালা… অসম শালা’ এইসব গাওয়া হত। তখন তো শ্রীজাতদা মুখ খোলেননি। আর সত্যি বলতে রবীন্দ্রনাথ এই নিয়ে মাথা ঘামাতেন বলে আমার মনে হয় না। কারণ উনি এই সব ঠাট্টা-ইয়ার্কির অনেক উর্দ্ধে। মাঝখান থেকে শ্রীজাতদা বললেন, এই অংশ যদি এডিট করে বাদ না দেওয়ায় হয় আমি কেস করব। কেসটা কাদের মধ্যে হবে, রবীন্দ্রনাথ বনাম কপিল শর্মা?’
এখানেই থামেননি অপরাজিতা, অভিনেত্রী আরও বলেন, 'আমাদের (বাঙালি)- রবীন্দ্রনাথের প্রতি নিঃসন্দেহে একটা আলাদা সেন্টিমেন্ট রয়েছে। উনি যে মাপের শিল্পী, সেখানে ওঁনার কাজে আমরা কী হাত দেব? আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমার তো নেই। কিন্তু কারুর মনে হয়েছে আমি করব, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের একটা লাইন নিয়ে কেউ ঠাট্টা-ইয়ার্কি করলে ওঁনার (রবীন্দ্রনাথের) কী এল-গেল? উনি তো একটা সমুদ্র। তবে আমার একটাই বক্তব্য, যদি আপনি কপিল শর্মার শো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে আপনাকে মীরাক্কেল নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। এই দ্বিচারিতাটা কেন? কপিল শর্মা-ক্রুষ্ণা অভিষেক বাঙালি নন বলে? বাঙালি হিসাবে ররীন্দ্রনাথকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিলে রোদ্দুর রায় কেন রবির গান বিকৃত করছে, সেটা নিয়েও বলতে হবে, মীর কেন করছেন সেটাও বলতে হবে আর ক্রুষ্ণা অভিষেক কেন করলেন সেটাও বলতে হবে।……এই ঘটনার পর সবাই মিলে কপিল শর্মার শো শেম শেম করে ওটার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হল। বর্তমানে আমাদের দেশে, আমাদের রাজ্যে অনেক জ্বলন্ত ইস্যু রয়েছে কথা বলার মতো। প্রতিবাদে সুর চড়ানোর মতো। রবীন্দ্রনাথ গেল গেল করে সুর চড়ানোর কোনও অর্থ নেই, বলেই আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে'।
অপরাজিতা যোগ করেন, ‘শ্রীজাতদা আমার খুব প্রিয় মানুষ, মীরদাও আমার খুব প্রিয় মানুষ। ওঁনাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমার এই মতামত নয়।’ অপরাজিতার পোস্টকে সাধুবাদ জানান, লেখিকা-চিত্রনাট্যকার সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি লেখেন, ‘এপিসোডটায় সত্যি বলতে রবীন্দ্রনাথকে কোথাউ ছোট করা হয়নি। একটা গানের লাইন নিয়ে করা আছে। আর কপিল শর্মার শো নিয়ে যদি কথা বলতে হয়, তাহলে এত যুগ ধরে মেয়েদের যা অপমান করা হয় ওখানে সেটা নিয়ে বরং কথা বলা উচিত’।
সেই প্রসঙ্গ টেনে অপরাজিতা বলেন, ‘কপিল শর্মার শো-তে তো বরাবরই মানুষকে নিয়ে মজা করা হয়, মেয়েদের নিয়ে ঠাট্টা করা হয়। কিন্তু মেয়েদের তো লঘুভাবে অপমান করা যায় না, সেটা নিয়ে তো কেউ প্রতিবাদ করল না?’
প্রসঙ্গত, কপিল শো-এর সাম্প্রতিক এপিসোডে হাজির হয়েছিলেন কাজল। জ্যাকি স্রফ সেজে ক্রুষ্ণা স্টেজে এসেই কাজলকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘আমি কখনো একা (একলা) যাই না… পাঁচলা যাই’। আর তাতে কপিল বলছেন, ‘একলা চলো রে…’! এবার ক্রুষ্ণা বলেন, ‘জীবনে চার বা পাঁচজনের দল বানিয়ে হাঁটো। একলা নয়। একদিন আমি রাস্তায় একা হাঁটছিলাম আর চার-পাঁচটা কুকুর আমায় ঘিরে ধরে। আমি জানি একমাত্র, সেদিন নিজের নিতম্বকে কীভাবে বাঁচিয়েছি আমিই জানি… তাই আমি সবসময় তিন, চার বা পাঁচজন নিয়ে হাঁটার পক্ষপাতি।’ ক্রুষ্ণার এই মস্করায় রবীন্দ্রনাথের অপমান হয়েছে বলে সরব হয়েছেন শ্রীজাত।