আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। কলকাতা পুলিশে আস্থা না রাখতে পেরে এই মামলার দায়িত্বভার মঙ্গলবারই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিকে ‘অভয়া’র বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার ‘নাগরিক সমাজের ধিক্কার পদযাত্রা’র আহ্বান জানায়। আরও পড়ুন-আর জি কর কাণ্ডে অগ্নিকে লালবাজারে তলব, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কী বললেন জনপ্রিয় RJ?
সেই মিছিলে যোগ দেন অপর্ণা সেন। শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় থেকে আরজি কর পর্যন্ত যায় এই মিছিল, যদিও শারীরিক অসুস্থতার জন্য মিছিলে পা মেলাননি অপর্ণা। তিনি গাড়ি করে সোজা পৌঁছান আরজি করের গেটে। সেখানে সিপিআইএম সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েন অভিনেত্রী-পরিচালক। অপর্ণাকে ‘চটিচাটা বুদ্ধিজীবী' বলে কটাক্ষ করে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান তোলা হয়।
এই বিক্ষোভের জেরেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেই আন্দোলনরত ট্রেনি, ইন্টার্ন ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মাঝে চলে যান অপর্ণা। এরপর ‘আরজি কর-সহ রাজ্যজুড়ে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে’ এই প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে নেন তিনি। কিছুক্ষণ বসার পর মাইক হাতে নেন।
মাইক হাতে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে অভিনেত্রী বলেন, ‘কলকাতার নাগরিক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমি লজ্জিত।’ এরপরই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের আক্রমণ শানান অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘সিভিক ভলান্টিয়াররা কারা? … এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ঢোকা বন্ধ করা হোক। এই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মধ্যেই লুকানো আছে যত নষ্টামির বীজ। পুলিশের জবাবদিহি করার প্রয়োজন আছে।’
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে ‘একশো শতাংশো সহমত’ অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘কেন পুলিশ মৃতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেও এটাকে একটা আত্মহত্যার ঘটনা বলে ঘোষণা করল? কেন পুলিশ তড়িঘড়ি এত ব্যস্ত হয়ে উঠল ময়নাতদন্ত করার জন্য? কেন এই হাসপাতালে যেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে সেখানেই কেন ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে বলা হল? এই সব প্রশ্ন আমাদের সকলের মনে উঠেছে এবং এই সব প্রশ্নের জবাব আমরা চাই। এই জবাব পাওয়ার অধিকার আমাদের আছে।’
কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিতভাবে কাজ করতে পারার অধিকার সব মেয়ের আছে, জানান অপর্ণা সেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্য সরকারকে সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দোষীদের কঠিন এবং ষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ‘আরশিনগর’ পরিচালক।
নির্যাতিতা মহিলা ডাক্তারের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে এসেছে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসকের গোপনাঙ্গ, চোখ ও মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মুখে ও নখেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার পেট, বাঁ পা, ঘাড়, ডান হাতে ও ঠোঁটেও ছিল আঘাতের চিহ্ন। ঘাড়ের হাড়ও ভেঙে যায়। ইতিমধ্যেই সঞ্জয় রায় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই মামলার কিনারার জন্য রবিবার পর্যন্ত পুলিশকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার আগেই হাইকোর্টের রায়ে মামলা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে।