আরজি করের চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে শুরু থেকেই সমর্থন করে এসেছেন এরাজ্যের বহু মানুষ। আম আদমি থেকে তারকা, সকলেই রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে। এমনকী অষ্টমী-নবমীতেও ধর্মতলায় ডাক্তারদের অনশন মঞ্চের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। তবে বৃহস্পতিবার কিঞ্জল নন্দ নিজেদের আন্দলনকে 'অরাজনৈতিক' বলে উল্লেখ করার পর থেকে চটেছেন বাম কর্মী সমর্থকদের একাংশ।
এবিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ আবার কিঞ্জল নন্দর সঙ্গে কুণাল ঘোষের যোগ রয়েছে, তাঁর বক্তব্য তৃণমূল মুখপাত্রের 'স্ক্রিপটেড' বলে দাবিও তুলেছেন। এমনকি কিঞ্জলের 'অরাজনৈতিক' শব্দটির ব্যবহারে তিনি 'কিছুটা বিরক্ত' বলে জানিয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র। এমনকি অভিনেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোনও আন্দোলন অরাজনৈতিক হয় কি?’ এই 'রাজনৈতিক' নাকি 'অরাজনৈতিক', এই বিতর্কে বিবৃতিও দিয়েছেন কিঞ্জল।
আর এবার এই বিতর্কে মুখ খুললেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অরিত্র দত্ত বণিক। এই 'রাজনৈতিক' নাকি ‘অরাজনৈতিক’ যুদ্ধে বিষয়টির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অরিত্র।
তিনি লেখেন, ‘কিঞ্জলদের আন্দোলন রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক এই নিয়ে অনেক বিতর্ক আসছে। আমি ক্লারিফাই করে দেই। ওদের আন্দোলন অবশ্যই রাজনৈতিক। এবারে তেড়ে আসার কিছু নেই। ভালো করে বুঝুন। ওদের দাবিগুলোর মধ্যে কখনো স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ বা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ এসেছে, এই পোস্টগুলো কোনো NGO র চেয়ারম্যানের পোস্ট নয়, এই চেয়ারগুলো "Core Political Society" - র পার্ট, দ্বিতীয়ত ওদের দাবির মধ্যে এসেছে মেডিকেল কাউন্সিল বা ইউনিয়নের ভোট সেটা ছাত্র রাজনীতি বা লোকাল প্রতিষ্ঠান গভর্নেন্সের রাজনীতি। তৃতীয়ত অভয়ার বিচার যদি দাবী হয় সেটাও রাজনীতি কারন জুডিশিয়ারি পলিটিকাল সিস্টেমের পার্ট, কারন স্ট্যাটিউটসের ইন্টারপ্রিটেশান, আইন প্রণয়ন তার ইম্পলিমেন্টেশান, সংবিধান সবটাই রাজনৈতিক গণিতের অংশ। তৃতীয়ত কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা বলুন, সিসিটিভি বলুন সবকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং এক্সিকিউশান। কারণ এই সিস্টেম সংস্কারের যে বড় লড়াইতে ওরা নেমেছে সেটা পলিটিকাল রিফর্মেশন ছাড়া সম্ভব নয়। আর এই প্রেক্ষিতে রাজনীতি মানে কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদীকে বাংলা বিরোধী বললেন, বা বিজেপি তৃণমূল দলকে চোর বললেন, তৃণমূল আবার সিপিএমকে ধানতলা বানতলা নিয়ে আক্রমণ করলো বা সিপিএম বিপরীতে চালচোর বলে তেড়ে গেলো সেই রাজনীতি নয়। কিঞ্জলরা যে রাজনীতি করছে সেটা প্লাটোর হিস্টোরিসিজম বা মিলের লিবার্টিতে অনেক আগেই লেখা আছে।’
অরিত্র আরও লেখেন, ‘ওরা পেশাদার রাজনৈতিক কমিউনিকেশন জানেনা তাই মাঝে মাঝে মিডিয়ায় বেলাইনে কথা বলে ফেলছে, এতে দোষ নেই। ওরা যদি আমাকে আমার রাজনীতি ও আইনের পেশার বাইরে হঠাৎ হিউম্যান এনাটমি বা বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে প্রশ্ন করে বসে আমিও এমন আজগুবি কথা বলে ফেলবো যেটা শুনে হাসি পাবে, কারণ আমরা কেউ সবজান্তা নই, সবাই এক একটা সাবজেক্টে স্পেশালিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। কিঞ্জলরা যে রাজনীতিকে এড়িয়ে যেতে চায় সেটা সাংগঠনিক রাজনীতি বা ব্র্যান্ডের রাজনীতি। কোনো দলীয় এম্বলেমের সরাসরি ছোঁয়া তারা রাখতে চাননা সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এই বিষয়ে আমরা কেউ কিছু বলতে পারিনা কিন্তু আন্দোলন, বিক্ষোভ, সংস্কার কোনোদিন রাজনীতিহীন হতেই পারেনা সংগঠন আর রাজনীতি একে ওপরের সম্পূর্ণ পরিপূরক নয়। ওরা যতক্ষণ নায্য দাবী নিয়ে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ততদিন ওদের এই রাজনীতির সাথেই থাকবো।’