একুশের ভোট ঘিরে সরগরম টলিগঞ্জ। কারণ ভোটের প্রচারে শুধু নয়, এবার ভোটের ময়দানেও টলিগঞ্জের একঝাঁক সদস্য। টলিপাড়ার অন্দর এখন তিনভাগে বিভক্ত, এক তৃণমূল শিবির, দুই গেরুয়া শিবির, এবং বাকি কিছু নির্দল ও বামমনস্ক বুদ্ধিজীবী। বিজেপির তরফে বারবার আক্রমণ শানানো হয়েছে টলিউডের বিশ্বাস ব্রাদার্স পরিচালিত ফেডারেশন ও আর্টিস্ট ফোরামকে নিয়ে। অভিনেতা ও টেকনিশিয়ানদের এই দুই সংগঠনকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেন অরূপ বিশ্বাস, যিনি টলিগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক এবং তাঁর ভাই তথা ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, দাবি করেছেন বাবুল সুপ্রিয়, রুদ্রনীল ঘোষরা।
‘ফেডারেশন’-কে কালিমালিপ্ত করার প্রতিবাদে রবিবার ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস্ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স্ অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ আয়োজন করা হয়েছিল এক ধিক্কার মিছিল। যদিও সেই মিছিলে নাকি তেমন সাড়া মেলেনি। কারণ সেদিন অনেকে জায়গাতেই শ্যুটিং ছিল, বাকি বহু তারকাই ভোট প্রচারে ব্যস্ত। এর জেরেই অন্তোষ ফেডারেশনের অন্দরে। উল্লে্খ্য, হাওড়ার এক জনসভায় বিজেপি-র তারকা প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ দাবি করেছিলেন, টলিউডে ‘মাফিয়ারাজ’ চলছে। মূলত রুদ্রনীলের মন্তব্যের প্রতিবাদেই রবিবার এই প্রতিবাদ মৌনীমিছিলের আয়োজন করা হয়। আর এই ধিক্কার মিছিলে যাঁরা শামিল হননি তাঁদের প্রছন্ন হুমকি দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছেন স্বরূপ বিশ্বাস ও অপর্ণা ঘটক। তাঁদের তরফে টেকনিশিয়ান ও শিল্পীদের কাছে একটি বার্তা গিয়েছে। সেখানে শেষ কয়েক লাইনে লেখা আছে- 'অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, যে সমস্ত স্বনামধন্য কলাকুশলীরা যেমন পরিচালক, চিত্রশিল্পী, ক্যামেরা পার্সন, রূপটান শিল্পী প্রমুখেরা আজকের এই ঐতিহাসিক মিছিলে যোগদান করলেন না, ফেডারেশনের অপমানের বিরোধিতা করলেন না, আগামী দিনে ফেডারেশন তাদের নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা করবে’।
এই ‘গভীর চিন্তা ভাবনা’র অর্থ কী? তা চিন্তায় সকলে। এই নিয়ে টলিগঞ্জ বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন, 'অরূপ বিশ্বাসের 'সুযোগ্য' ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের 'চরম নৈরাজ্যের ক্যাপ্টিনশিপ-এ' চলা (আসলে চলতে বাধ্য করা) 'ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস্ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স্ অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া' তরফে এটি জারী করা হয়েছে | শেষের চারটি লাইন পড়ুন কি ভাবে স্পষ্ট ভাষায় 'ধমকি' দেওয়া হয়েছে'।
বাবুল আরও জানান, 'মজার ব্যাপার এই যে, এই দুই ভাই যারা নিজেদের 'সর্বশক্তিমান বাহুবলি' মনে করেন, তাঁরা জানেন না যে, ধমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, জোর করে যাঁদের ওনারা গতকালের মিছিলে টেনে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা এই দুই 'ভাই'এর অত্যাচারে তিতিবিরক্ত এবং চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট - এঁরাই এই দুই ভাইকে শুধু টালীগঞ্জ পাড়া ছাড়া করবেন তাই নয়, বিধানসভার নির্বাচনেও 'চুপ চাপ পদ্মে ছাপ' দিয়ে #TMchhi কে বিপুল ভোটে পরাস্ত করবেন !! আসন্ন দোসরা মে আমার কথাগুলি মিলিয়ে নেবেন !!'
আর যার মন্তব্যকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই রুদ্রনীল কী বলছেন? ভবনীপুরের বিজেপি প্রার্থী বললেন, ‘রবিবারের মিছিলে যাঁরা সামিল হয়েছেন, তাঁরা ফেডারেশনের ভয়ে ভীত। স্রেফ রুজিরুটির তাগিদে যোগ দিয়েছেন তাঁরা’। এই ভয় কাজের পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে বলেও জানান রুদ্রনীল।