দীর্ঘ এক মাসের আইনি টানাপোড়েনের পরে অবশেষে সোমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের মুক্তি পেল ‘ব্যাড বয় বিলিয়নেয়ার্স: ইন্ডিয়া' । মোট ৩টি এপিসোডে ভাগ হয়ে আপতত এই তদন্তমূলক ডকু-ড্রামার মুক্তি পেয়েছে। যার কেন্দ্রে রয়েছে তিন ভারতীয় বিলিওনেয়ারের বিতর্কিত ও উত্থান-পতনে ভরপুর জীবন।
মূলত ঋণখেলাপির মামলায় পলাতক নীরব মোদী, বিজয় মালিয়া এবং দেশের অপর দুই বিজনেস টাইকুন রামলিঙ্গ রাজু ( সত্যম কম্পিউটার সার্ভিসের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সিইও) ও সুব্রত রায় (সাহারা গ্রুপ)-কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তৈরি হয়েছে এই ডকু-ড্রামা। সিরিজের চতুর্থ এপিসোডটি এখনো মুক্তি পায়নি যেটি সত্যম কম্পিউটার সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা রামলিঙ্গ রাজুর উপর তৈরি হয়েছে। এখনও হায়দরাবাদের আদালত এই এপিসোডটির মুক্তি স্থগিত রেখেছে। যদিও ইতিমধ্যেই এই স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ।
৯০০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির দায়ে অভিযুক্ত বিজয় মালিয়ার ছেলে সিদ্ধার্থও মুক্তির দিনেই এই সিরিজ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। ‘ আমার বাবার জীবনযাত্রার জন্য তাকে টার্গেট করা খুব সহজ। তিনি নিজের টাকা দু হাতে খরচ করতে কখন দ্বিধাবোধ করতেন না। সবাই বলছেন,তিনি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করেছেন,তার কর্মচারীদের বেতন দেননি,অর্থ পাচার করেছেন। আসলে যে কোনও সরকারের একজন রাজনৈতিক ঘুঁটির দরকার হয় যাকে রাজনীতির মঞ্চে উদাহরণ স্বরূপ ব্যবহার করা হয়', জানান সিদ্ধার্থ মালিয়া। তিনি যোগ করেন, ‘ এছাড়া বাবার আলকোহোলের ব্যবসা ছিল বলে সবাই চাইত কেলেঙ্কারির গল্প শুনতে। সুতরাং তাকে টার্গেট করা খুবই সহজ। কিন্তু আমার বাবা কোথাও ইস্পাত প্লান্ট তৈরি করেছেন আবার কোথাও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড। তিনি তার এয়ারলাইন্স বাঁচানোর চেষ্টাতেও কোনো ত্রূটি রাখেননি’।
২০১৬ সালের মার্চে লন্ডনে পালিয়ে যান বিজয় মালিয়া ।ইতিমধ্যেই তার প্রত্যার্পণের মামলায় ইউকের কোর্টে জয়লাভ করেছে ভারত। যদিও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এই প্রত্যাপর্ণ এড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন মালিয়া। যার নিষ্পত্তি এখনও ঝুলে রয়েছে সে দেশের আদালতে ।
কানাডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক ডিলান মহান গ্রে এই সিরিজটি পরিচালনা করেছেন। প্রথম এপিসোডের ব্যাপারে হিন্দুস্তান টাইমস কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্দেশক জানান , ' বহু প্রত্যাশার পর অবশেষে সিরিজটি মুক্তি পাওয়ায় আমি ভীষণভাবে খুশি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে বাক স্বাধীনতা প্রকাশের ক্ষেত্রে এই সিরিজ ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় সকলেই এই নিবেদনের প্রশংসা করবেন । '
সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল গত ২রা সেপ্টেম্বর। কিন্তু পাঞ্জাব ন্যাশান্যাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অন্যতম অভিযুক্ত মেহুল চোকসির নাম এই ডকুমেন্ট্রিতে উঠে আসায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বর্তমানে অন্টিগা তে আছেন চোকসি । তার আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল এর মাধ্যমে দিল্লির কোর্টে মামলা করে দাবি করেন এই সিরিজ তার নামের মর্যাদায় আঘাত হানতে পারে। মেহুল ছাড়াও রাজু এবং সুব্রত একই মামলা দায়ের করেছিলেন ।কিন্তু সেবার কেন্দ্রকে প্রয়োজন অনুসারে ওয়েব কনটেন্ট রেগুলেট করার পরামর্শ দিয়ে হাত তুলে নেয় আদালত ।যদিও পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় সরকার ওটিটি প্লাটফর্মে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে দেওয়ায় এই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।