মঙ্গলবার ‘ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত মুখ গেরুয়া বসনধারী এক বৃদ্ধ। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে জাতীয় পতাকা ধরে পুলিশের জল কামান, টিয়ার গ্যাসের মুখোমুখি হলেন সাধুবাবা। কিন্তু তাঁকে টলানো গেল না। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় সেই চর্চিত সাধুবাবার এক দৃশ্য বন্দি হয়, যেখানে তিনি পুলিশকে ‘হাতে চুড়ি পরার’ নিদান দিচ্ছেন।
সেই নিয়ে শুরু নয়া বিতর্ক। কেউ তাঁকে আন্দোলনের নির্ভয় মুখ বলে দাবি করেন, কেউ আবার প্রশ্ন তোলেন ছাত্র আন্দোলনে বুড়ো সাধু কী করছিল? খোঁজ শুরু হয় কে সেই বৃদ্ধ? জানা যায়, ওই গেরুয়া বসন বৃদ্ধের নাম বলরাম বসু। ঋষি অরবিন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত বলরামের সাফাই তিনি পুলিশকে মোটেই চুড়ি পরার কথা তিনি বলেননি।
যদিও সেই বিতর্কিত ‘নারীবিদ্বেষী মন্তব্য’নিয়ে সরব টলিউডের প্রমিলা ব্রিগেড। সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে মুখ খুলেছেন অপরাজিতা আঢ্য। তিনি বলেন,'তাঁর মা জন্ম দিয়েছেন। মা দুর্গাও চুড়ি পরেন, মা কালীও চুড়ি পরেন। যাঁদের আমরা পুজো করি, যে শক্তির আরাধনা করি... তাঁদের হাতের চুড়ি তো শক্তির প্রতীক'। ছোটপর্দার লক্ষ্মী কাকিমার কথায়, ‘শিব-শিবা মিলে কিন্তু শক্তি এবং চুড়ির অনেক তাৎপর্য রয়েছে।….উনি যদি সেটা না জানেন সেটা ওঁর অজ্ঞতা।’ তবে সবাই সবটা নাও জানতে পারে, কিন্তু এই ধরণের মানসিকতার সমালোচনার করেন অপরাজিতা।
টেলিপাড়ার জাঁদরেল খলনায়িকা মিশমি। আপতত কোন গোপনে মন ভেসেছে ধারাবাহিকে দেখা যাচ্ছে তাঁকে নায়কের বোনের ভূমিকায়। মিশমির কথায়, ‘এটা তো একদিক থেকে মেয়েদের অপমান করাই। যাঁরা হাতে চুড়ি পরে থাকে তাঁরা কি দু্র্বল? না তো! এ শক্তির প্রতীক। আমার মনে হয় এই সমস্ত কিছু করে আসল লক্ষ্য থেকে সবাই সরে যাচ্ছি। এসব করা উচিত নয়। যা মূল লক্ষ্য সেদিকেই স্থির থাকা উচিত।’ লেখিকা তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, এটি দীর্ঘকালের যে সংস্কার পুরষতন্ত্র বয়ে বেড়িয়েছে এটা তারই প্রতিফলন মাত্র।
বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সরব রূপম ইসলামের স্ত্রী রূপসা দাশগুপ্তও। সেই নিয়ে ‘হল্লা বোল’ লেখা পোস্টারও শেয়ার করেন রূপসা। বিতর্কের জল গড়াতেই বুধবার সন্ধ্যায় বলরাম বসু সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানান ওই ভঙ্গির মাধ্যমে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি দেখাতে চেয়েছিলাম পুলিশ একনায়কতন্ত্রের দাসত্ব করছে। সেই দাসত্বকে ভেঙে ফেলার কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম হাতক়ড়া ছেড়ে চলে এসো। বলেছিলাম আরও জল ফেলো আমরা সব বয়ে চলে যাই’।
তিনি বলেন, এখানে যে প্রশাসন চলছে প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয়, জাস্টিস দিতে না পারলে, প্রতিবাদ হবে, তুমি ভুল করছ, তুমি ঠিক করো নিজেকে। কিন্তু কেউ যদি সংশোধন না করতে চায় তবে আরও প্রতিবাদ হবে।