বাংলায় থেকে বাংলা গান শুনতে রাজি নয়, এমন দর্শককে কড়া ভাষায় দু-চার কথা শুনিয়ে ছিলেন ইমন চক্রবর্তী। গায়িকার সেই ধমকের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি তুমুল ভাইরাল হয়। সেই নিয়ে অধিকাংশই বাঙালিই ইমনের পাশে দাঁড়ান, তবে কেউ কেউ সমালোচনাও করেন। তার মাঝেই ব্রায়ান অ্যাডামসের কনসার্টে ইংরাজি গানের তালে নেচে সমালোচনার শিকার ইমন। আরও পড়ুন-'ওকেও চুলের মুঠি ধরে...' বাংলা গান নিয়ে জ্ঞান দিয়েই ব্রায়ান অ্যাডামসের কনসার্টে নাচ! চরম ট্রোল্ড ইমন
এক কথায় গত কয়েকদিন জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে জাতীয় পুরস্কার জয়ী গায়িকা। এর মাঝেই মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুর উৎসবে পারফর্ম করলেন ইমন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে মঞ্চ মাতালেন। ইমনের গানের প্লে-লিস্টে মূলত বাংলা গানই আধিক্য পেয়েছিল। রঙ্গবতী থেকে আলাদা আলাদা-র মতো জনপ্রিয় বাংলা ছবির গান গাইলেন গায়িকা। সঙ্গে থাকল ইমনের পছন্দের লোকগান। গাইলেন, ‘বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা’র মতো পরিচিত ফোন গান। কিন্তু এদিন কোনওরকম অনুরোধ ছাড়াই ইমন মঞ্চে গাইলেন তাঁর খুব প্রিয় হিন্দি গান।
‘জারা জারা বহেকতা হ্যায়’ এবং ‘আফগান জলেবি’র মতো হিট হিন্দি গান এদিন গেয়ে শোনালেন ইমন। লাল রঙা ব্লেজার, ম্যাচিং ঢলা প্যান্ট আর মাফলার গলায় পুরোদস্তুর ‘রকস্টার’ ইমন। মাঝেমধ্যে স্টেজে ঠুমকাও লাগালেন। স্টেজে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘একটা বলি, চাইলে এই কথাটা তোমারা ফোনে রের্কড করে নিতে পারো। তবে আজকাল তো যাই বলছি, দেখছি সেটা ফেসবুকে…’। এরপর ইমন জানান, দুর্গাপুরবাসীর মতো সুরেলা দর্শক তিনি খুব কম জায়গায় দেখেছেন।
পাশাপাশি এদিন রাতে বাংলা ও বাঙালির অপমানে গর্জে ওঠার জন্য বাংলা পক্ষর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংগঠনের তরফে সম্মান জানানো হয় ইমনকে। গায়িকা শুরুতে অবশ্য গোটা ব্যাপার বুঝে উঠতে পারেননি। বাংলাপক্ষের তরফে বলা হয়, ‘আপনাকে ব্যক্তিমানুষ হিসাবে, বা শিল্পী হিসাবে শুধু নয়। বাংলার অপমানের জন্য আপনার যে চেতনাটা নাড়া দিয়েছে, এটা থেকে গোটা বাংলার মানুষ যে সাহস পেয়েছে, সেই চেতনাকে আমরা সম্মান দিতে চাই’। এদিন বাংলা পক্ষের তরফে একটি ফুলের তোড়া এবং বই দিয় সম্মানিত করা হয় ইমনকে। হাসিমুখে তা গ্রহণ করেন গায়িকা।
সেই সময় ইমনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর স্বামী, নীলাঞ্জন। বাংলা ভাষা নিয়ে ইমনের গর্জনকে ‘ভাণ্ডামি’ কিংবা ‘হিপোক্রেসি’ বলেছেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি। নাম না করেই পালটা জবাবও দেন ইমন। দু-দিন আগে ফেসবুকে তিনি স্পষ্ট লেখেন, ‘আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করা একটা মেয়ে, বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারা একটা মেয়ে। এখানে আমার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থাকেন। আমার গোটা পৃথিবী এখানে থাকেন। কোথাও কেউ কোনোভাবে আমার ভাষাকে ছোট করে কথা বললে আমি আবার ওই একই কথা বলব, একইভাবে প্রতিবাদ করব। তাতে কেউ যদি ভাবেন যে আমার স্বার্থ এতে চরিতার্থ হচ্ছে তাহলে সেটা তাদের ভাবনা, আমার না। সব ভাষার সমান গুরুত্ব আছে অবশ্যই। আমার মাকে যেমন খারাপ বলার অধিকার কেউ দেয়নি। ঠিক সেইভাবে আমার ভাষাকে ছোট করার অধিকারও কেউ কাউকে দেয়নি।’