কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে মানতে নারাজ দেশের একাংশ। অগস্ট মাসে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, তা এখন ভিন্ন আকার ধারণ করেছে। হাসিনার সরকারের পতনের পর তীব্র হচ্ছে সেদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বদলে ফেলার দাবি। যা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশীদের একাংশ জাতীয় সংগীতের বদল নিয়ে বিরোধিতা করেছেন। সমাবেত জমায়েতের মাধ্যমে তাঁদের ‘ও আমার সোনার বাংলা’ গাইতেও দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সে দেশের নাগরিকরা সামাজিক মাধ্যমে।
সেরকমই একটা পোস্ট ভাইরাল ফেসবুকে। যা করা হয়েছে Langjam Pushpi নামের অ্যাকাউন্ট থেকে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘অবশ্যই জাতীয় সঙ্গীত বর্জন করা উচিত। শুধু জাতীয় সংগীত নয় জাতীয় কবিও পরিবর্তন করা উচিত। কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মেছেন। জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করা উচিত, এটি নকশা করেছেন শিব নারায়ন দাশ।’
‘সাত বারের নাম, বারো মাসের নাম বর্জন করা উচিত, ওগুলো ভারতীয় জ্যোতির্বিদরা নামকরণ করেছেন। বিভিন্ন গ্রহ তথা হিন্দুদের বিভিন্ন দেবতার নামে। সর্বোপরি বাংলা ভাষাটাই বর্জন করা উচিত, কারণ বাংলা ভাষা এসেছে ভারতীয়' গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে।শুধু এগুলোও না, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ-এর জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ভারতীয় নাগরিক। চলুন বাংলাটাই বাদ দেই।’, আরও লেখা হয়েছে সেই পোস্টে। এক নেটিজেন মস্করা করেই মন্তব্য করেন, ‘আমার দাবি সূর্যমামা আর চন্দ্রমামার নাম পরিবর্তন করে, আব্দুল মামা আর জব্বার মামা রাকা হুক’।
কদিন আগে বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনও এই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে ওঠা দাবি প্রসঙ্গে পোস্ট করেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখেন, ‘জাতীয় সংগীত ছাড়া আমার দেশ নিয়ে গর্ব করার বেশি কিছু পাই না আমি। প্যারিসে যখন ছিলাম, ফরাসি বন্ধুদের বলতাম, তোমাদের জাতীয় সংগীত লা মারসেইয়েজ-এ কেবল রক্ত নেওয়া আর খুনোখুনির কথা বলা হয়েছে, আমাদের জাতীয় সংগীতে আছে ভালবাসার কথা। আমি বাংলায় গানটি গেয়ে অনুবাদ করে দিতাম। ওরাও মুগ্ধ হতো গানের কথা শুনে। অনেক দেশের জাতীয় সংগীতের কথা ও সুর আমি শুনেছি, কোনওটিই আমার সোনার বাংলার ধারে কাছে আসতে পারে না।’
‘আজ বেচারা দেশ আমার, জিহাদিদের কবলে। জিহাদিরা রক্ত খুন ইত্যাদি পছন্দ করে। তাদের হৃদয় ঘৃণায় টইটম্বুর। তারা ভালবাসার মূল্য বোঝে না। সে কারণে দেশের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ হয়েছে এমন জাতীয় সংগীত তাদের ভাল লাগে না। …আহা দুঃখিনী দেশ আমার! দেশের জাতীয় সংগীত কেড়ে নেওয়া দেশের হৃদপিণ্ড কেড়ে নেওয়ার মতো। জিহাদিদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবে আমার দেশ, জানি না।’, আরও লেখা হয়েছিল তাঁর সেই পোস্টে।