বাংলাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার সঙ্গেই ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। আন্দোলনরত ছাত্র আবু সইদের মৃত্যুর পরই রাস্তায় নামেন অভিনেত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বাঁধন। তবে আবার ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণেই নাকি তিনি খুনের হুমকি পেয়েছিলেন, এমনকি অ্যাসিড হামলার মতো ভয়ঙ্কর হুমকিও তাঁকে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এবিষয়েই মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন।
ফেসবুকে এক সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন, সেখানেই নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় যেদিন আমি নিজের প্রোফাইল পিকচার কালো করে নিই, তখন থেকেই আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল যে আমি সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ তার আগে আমার ফেসবুকের কভারে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি ছিল। কারণ, আমি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম। তাই সেই ছবি বদলে কালো করি, স্টেটাস দিয়ে বলেছিলাম, বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এরপরই বিভিন্ন ফোন পাই, এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে মানা করা হয়।’
আরও পড়ুন-স্বৈরাচারী কন্যার জন্যই বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা হয়েছে, ধিক্কার জানাই, আর বলতে চাই…: বাঁধন
বাঁধন বলেন, ‘এরপর ১ অগস্ট যখন আমি ১ অগস্ট রাস্তায় নামলাম, তখন থেকে আমায় বলা হতে থাকল, আমি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ করছি। তাই আমায় তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। এসব বলেও যখন কোনও কাজ হল না। তখন আমায় বলা হল আগের সরকারের সেনা কিংবা পুলিশ আমায় গুলি করবে। আমায় অ্যাসিড মারা হবে। যেহেতু আমি অভিনেতা, তাই আমায় গুলি করার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বুঝে অ্যাসিড মারার ভয় দেখানো হয়। এমনকি রাস্তায় আমার কাপড় খুলে দেওয়া হবে। এমন হুমকিও পেয়েছি।'
বাঁধন বলেন, 'আমার বাড়িতেও হামলার হুমকি দেওয়া হয়। তাই বাড়ির জন্য আলাদা করে নিরাপত্তা নিতে হয়েছিল আমাকে। এসব দেখে আমার মা কান্নাকাটি করতে শুরু করেন। আমার বাচ্চাও আছে। আমি বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকি। বাবাও খুব ভয় পেয়েছিলেন। তবে বাবাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমায় ছাত্রদের পাশে থাকার কথা বলেছিলেন। এদিকে ৪ অগস্ট যখন কার্ফু জারি করা হল, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম সবাই। ভেবেছিলাম, সকলকে মেরে ফেলা হবে। উনি (শেখ হাসিনা) সকলকে মেরে ফেলবেন, তবু নিজে পালাবেন না। সেদিন রাতে আমিও খুব কেঁদেছিলাম। এরপর ৫ অগস্ট আমার বাবা-মা এবং মেয়ে কিছুতেই আমায় বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছিলেন না। সকলেই বলছিল, বের হলে তোমায় ওরা গুলি করবে।’
বাঁধন বলেন, ‘বাবা-মা ভয় পেয়েছে দেখে আমি বললাম, আমি বোরখা পরে যাচ্ছি। কারণ যাঁরা আমায় অ্যাসিড মারবে বা গুলি করবে, তাঁদের তো আমায় চিনতে হবে আগে। তাই আমি বোরখা পরেই রাস্তায় নামি। তারপর দেখি রাস্তা লক্ষ লক্ষ মানুষ। তখন বুঝলাম, আর কিছুই করতে পারবে না ওরা। এরপর সেনাপ্রধান যখন বক্তব্য রাখলেন, তখন আমরা সবটা জেনে যাই, আনন্দে বোরখা খুলে পতাকা জড়িয়ে ধরে। এরপর আনন্দে রিকসা নিয়ে গোটা ঢাকা ঘুরেছি।’