‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’- মাসখানেক আগে উইলচেয়ারের বসেই মঞ্চে এই গান গেয়েছিলেন ওপার বাংলার কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর। সোমবার জীবনের গল্প বাকি রেখেই বিদায় নিলেন শিল্পী। এদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ না-ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশের ‘প্লে-ব্যাক সম্রাট’।বয়স হয়েছিল ৬৫ বছরএই খবর নিশ্চিত করেছেন সঙ্গীত পরিচালক ইথুন বাবু। নিজের জন্মভিটে রাজশাহীতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন শিল্পী।
বাংলাদেশের এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ভুগছিলেন মারণরোগ ক্যানসারে। গত বছর সেপ্টেম্বরে চিকিত্সার জন্য উড়ে যান সিঙ্গাপুর। সেখানে একটানা ন' মাস ধরে চিকিত্সা চলেছে। নন-হজকিন লিম্ফোমা নামের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর, তাও লাস্ট স্টেজে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছিল তবে লিভার এবং স্পাইনাল কর্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল ক্যানসার। ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন সময় বেশি নেই। এন্ড্রু কিশোরের অনুরোধেই গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফেরানো হয় শিল্পীকে। ভালোবাসার মানুষদের মাঝেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি।
রবিবার রাতেই গত ন মাসের জীবনযুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত ফেসবুক পোস্ট লেখেন এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী ইতি কিশোর। তাঁদের দুই সন্তান জে এন্ড্রু সপ্তক এবং মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়, দ্রুত দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
তিনি ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রাজশাহীতে। প্লে-ব্যাকের দুনিয়ায় তাঁর সফর শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ ছবিতে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর রেকর্ড করা গানে সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। অন্যতম জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায়…।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ওপার বাংলার শিল্পীমহল,কাঁদছেন তাঁর অগণিত গুণমুগ্ধ শ্রোতা-দর্শকরা। এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'এন্ড্রু কিশোর তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন'।