‘বসুশ্রী’ সিনেমা হল। বাঙালীর কাছে একটি আবেগ বটে। কত ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রেক্ষাগৃহ। পথের পাঁচালী-সহ বহু কালজয়ী ছবির প্রিমিয়ার হয়েছে হাজরা মোড়ের কাছে এই প্রেক্ষাগৃহে। সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরও বসত এখানে। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে এর মালিকানা হস্তান্তর হবে।
একটা সময় ছিল যখন উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, মান্না দে, আল্লা রাখা, কিশোর কুমার, রাহুল দেব বর্মনের মতো খ্যাতনামা শিল্পীরা এসেছেন এই প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু আগের মতো দর্শক উপস্থিত হচ্ছেন না তাই লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে মালিকদের। এই কারণেই বসুশ্রীকে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছেন মালিকদের একাংশ। চলতি বছরে পুজোর আগেই ২০ বছর আগে বন্ধ হওয়া ‘গ্লোব’ সিনেমা হলের নতুন চেহারায় প্রত্যাবর্তন হতে চলেছে। তাই খুশি সকলেই। এই পরিস্থিতিতে বসুশ্রীর হাত বদলের খবর শুনে বিমর্ষ সকলেই।
আরও পড়ুন: (‘পুরুষ তারকাদের চড়া পারিশ্রমিক দেওয়া বন্ধ করতে হবে করণকে…’ তোপ জোয়ার)
১৯৪৭-এর ১৯ ডিসেম্বর চালু হয়েছিল বসুশ্রী। দর্শকাসন মোট এক হাজার। তার মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৭০০টি এবং ব্যালকনিতে ৩০০টি আসন। হলটি উদ্ভোধনের দিন উদয়শঙ্করের কল্পনা এবং এমএস শুভলক্ষ্মীর ‘মীরা’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। ১৯৫৫ সালে এখানেই পথের পাঁচালীর প্রিমিয়ার হয়। অমিতাভ বচ্চনের ‘দো আনজানে’ ছবির শুটিংও হয়েছিল বসুশ্রী সিনেমা হলে।
বসুশ্রীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সত্যভূষণ বসু। এতে বিনিয়োগ করেছিলেন ইন্দ্রভূষণ বসু। ডিরেক্টর ছিলেন হিমাংশু বোস। পরবর্তীকালে বসুশ্রীর ডিরেক্টর হন নির্মলকুমার বসু। যিনি মন্টু বোস নামেও পরিচিত। এক সময়ে তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা ছিলেন। সেই পরিবারের অন্যতম সদস্য সৌরভ বসু সংবাদসংস্থা ‘এই সময়’-কে বলেন, বসুশ্রী সিনেমা হলের সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এখন আর সিনেমা হল চালিয়ে লাভ না হলেও। বসুশ্রী বিক্রি হয়ে যাক, সেটা চান না তিনি।তাঁদের পরিবারের কেউ কেউ হলটা বিক্রি করে দিতে চাইছেন। কিন্তু তিনি এর ঘোর বিরোধী।
আরও পড়ুন: (সদ্যই হারিয়েছেন মাকে, সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের রেশ, এবার পুজো হচ্ছে না সুদীপার বাড়িতে? কী জানালেন?)
কিন্তু বসু পরিবারেরই অপর এক সদস্যের মতে, টিকিট বিক্রি করে আর দোকান ভাড়া দিয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে খরচ উঠছে না। এখন মাল্টিপ্লেক্সের যুগ। বসুশ্রীকে মাল্টিপ্লেক্সে পরিণত করতে হলে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সেটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
অভিনেতা ও নাট্যকর্মী কৌশিক সেনের মতে সব ক্ষেত্রে হল মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। দর্শকরা যদি সেখানে গিয়ে বেসিক কমফর্ট না-পান, তা হলে সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখা মুশকিল। শুধু স্মৃতি আঁকড়ে থেকে কোনও লাভ হয় না সেই ক্ষেত্রে।