মু্ম্বই জন্ম, সেখানেই বড় হওয়া।পেন্টিং আর সেরামি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন,এরপর কলকাতায় আসা। স্বপ্ন ছিল প্রোডাকশন ডিজাইনার হওয়ার তবে তিলোত্তমায় এসে হয়ে গেলেন অভিনেত্রী। কথা হচ্ছে অনিন্দিতা বসুর। যিনি পাতাল লোকের চন্দা হিসাবে এখন গোটা দেশে শোরগোল ফেলেছেন।
২০১১ সালে গানের ওপারে ধারাবাহিকের সঙ্গে অভিনয় কেরিয়ার শুরু অনিন্দিতার,এরপর দেখতে দেখতে অভিনয় জীবনের প্রায় এক দশক পূর্ন করতে চলেছেন অভিনেত্রী। আমাজন প্রাইমের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ মোড় ঘুরিয়ে দিল অনিন্দিতার কেরিয়ারের। এত প্রশংসা,এত খ্যাতি-স্বভাবতই উচ্ছ্বিসত পর্দার চন্দা।
প্রসিত রায় ও অবিনাশ অরুণ পরিচালিত এই ক্রাইম থ্রিলার যে এতটা সাড়া ফেলবে স্বপ্নেও ভাবেননি অভিনেত্রী। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে অনিন্দাত জানান, ‘আমি ভীষণ হতবাক এবং আনন্দিত বলতে পারেন। সত্যি জানি না এত ভালোবাসা এবং প্রশংসার কী জবাব দেব..সত্যি বলতে এমন অনেক মানুষজন, আমি নিজে যাঁদের ফ্যান তাঁরা আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন’।
‘..এটুকু বলতে পারি পাতাল লোকের সুবাদে আমাকে অনেক মানুষ চিনছেন,লক্ষ্য করছেন। আশা করছি এবার অন্তত আমার পছন্দের তালিকায় থাকা পরিচালক বা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাব। এই ধরণের চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আরও বেশি করে আমার ঝুলিতে আসবে'।
সুদীপ শর্মার লেখা মোট ৯টি পর্বের এই ওয়েব সিরিজের কাহিনি এগিয়েছে হাতিরাম চৌধুরি (জয়দীপ আহলাবত) নামের এক পুলিশ অফিসারকে ঘিরে। এক নামী সাংবাদিককে (নীরজ কবি) হত্যার চেষ্টার দায়ে গ্রেফতার চার অভিযুক্তের একটি কেস হাতিরামের জিম্মায় আসে। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার নগ্ন রূপ এই সিরিজে ফুটে উঠেছে পাতাল লোকে। ঠিক কোন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে অপরোধ প্রবণতা জেগে উঠে সেই জটিল মনস্তত্বও ধরা পড়েছে অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত এই শোয়ে।
এই সিরিজে বাঙালি কন্যা হিসাবেই দেখা মিলেছে অনিন্দিতার,চন্দা মুখোপাধ্যায়।সিরিজের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই রহস্যের বেড়াজালেই লুকিয়ে ছিল চন্দা। কিন্তু স্বল্প উপস্থিতিতেও উজ্বল অনিন্দিতা। পাতাল লোকের চন্দা চরিত্রের জন্য যখন অডিশনের জন্য ফোন আসে তখন কলকাতাতেই ছিলেন অভিনেত্রী। রোলটি ঝুলিতে পোড়বার পরেও চন্দার চরিত্র নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা ছিল অনিন্দিতার মনে। ‘আমি যখন ওর সম্পর্কে পড়লাম,আমি বেশ কনফিউজড ছিলাম। সুদীপ আর প্রসিত ঠিক কীভাবে ওকে ফুটিয়ে তুলতে চাইছে? আমি বারবার প্রশ্ন করেছিলাম ওদের। চন্দা কী একজন ধূর্ত মহিলা নাকি সে সমাজ ব্যবস্থার শিকার? ওরা চেয়েছিল আমি এই দুইয়ের মাঝামাঝি একটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলি। ওরা বলেছিল চন্দা জানে সে কী করছে’,জানান অনিন্দিতা।
‘আমার প্রথম চরিত্রটি ছিল হাতিরামের সঙ্গে,প্রথমদিনের শ্যুটিং হিসাবে বেশ শক্ত একটা দৃশ্য বলা যেতে পারে।কিন্তু জয়দীপ এবং পুরো টিম আমাকে এত সহজভাবে গ্রহণ করেছে যে চন্দা চরিত্রটা খুব সহজ হয়ে উঠেছিল। চন্দার চরিত্র আমার জীবনে একটা মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে বলতে পারেন’।
এই সিরিজের নারী চরিত্রগুলি মারাত্মকভাবে ভিন্ন,সেটাই পাতাল লোকের ইউএসপি,মনে করেন অনিন্দিতা। ‘বলতে পারেন ডলি (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) সারা (নীহারিকা সিং) হল স্বর্গলোকের বাসিন্দা, রেনু (গুল পনাগ) মর্ত্যলোকের আর চন্দা (অনিন্দিতা বসু) এবং চিনি (মাইরেমবাম রোনাল্ডো সিং) পাতাল লোকের বাসিন্দা,এটাই পাতাল লোকের সেরা প্রাপ্তি। চন্দা কিন্তু একজন লড়াকু মহিলা,যে জানে সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে,কিন্তু তারপর মানে সে ভিলেন নয়। হয়ত সে ঠগ কিন্তু সে নিজের শর্তে জীবনটা বাঁচতে জানে। হয়ত সে চায় একদিন পাতাল লোক থেকে মর্ত্যলোক এবং তারপর সেটা ছাড়িয়ে স্বর্গলোকে পৌঁছোতে,শুধু এইটুই ওর চাওয়া।
টলিউডে ভূতের ভবিষ্যত,হেমলক সোসাইটি থেকে সাম্প্রতিক সময়ে লাভ আজ কাল পরশুর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন অনিন্দিতা। টলিগঞ্জে নিজের কমফোর্ট জোন ছেড়ে মুম্বইয়ে ফেরার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। কেন ফিরলেন তিনি? ‘আমি সত্যি ভয় পেয়েছিলাম মুম্বই ফিরতে,আসলে এখানে(কলকাতা) একটা সুরক্ষিত জোন রয়েছে বলতে পারেন। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমার কাছে একই ধরণের চরিত্রের অফার আসতে লাগল,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এবার সেই কমফোর্ট জোন ছেড়ে বেরোতে হবে। বলতে পারেন ক্লান্ত হয়েগিয়েছিলাম’, এক নাগাড়ে বলে গেলেন অনিন্দিতা। 'মুম্বইয়ে কাজের চেষ্টা শুরু করেছি তিন বছর আগে,প্রথম জাতীয় বিজ্ঞাপন পেতে আমাকে ৫০টা অডিশন দিতে হয়েছে!সহজ ছিল না। এরপর ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপন আসতে থাকে এবং আমি প্রথম ন্যাশানাল শো পাই-'থিনকিস্তান'। পরের জার্নিটা ভীষণ মধুর'।
১৫ থেকে আমাজই প্রাইমে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে পাতাল লোকের।