‘ম্যায় মুলায়ম সিংহ যাদাব’ ছবির মোশন পোস্টার মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। আগামী ১৫ই অগাস্ট এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। তবে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ এর কারণে সারা দেশে জরুরি অবস্থা। সেক্ষেত্রে এখনই বলা যাচ্ছে না যে এই বায়োপিকের মুক্তি কত দিন পিছিয়ে যেন সিনেমার জন্য সাজানো স্ক্রিপ্ট--
টলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও কাজ করার প্রবল ইচ্ছে ছিল প্রথম থেকেই। গত দুই বছর ধরে মুম্বইতেই রয়েছি। আমার প্রথম হিন্দি ছবি (চেস..নো মার্সি টু ক্রাইম) ছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে, ক্রাইম থ্রিলার। বেঙ্গল পুলিশের ব্যাঙ্ক ডাকাতির একটা কেস, যার যোগ ছিল ঝাড়খন্ড, নেপাল হয়ে ব্যাংকক পর্যন্ত। কিছু অসাধু রাজনৈতিক যোগাযোগ জড়িয়ে ছিল এই ডাকাতির সঙ্গে। ছবিটা রিলিজ করার পর দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পাই।যাবে।

নিজের মধ্যে অত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। তখন থেকেই পাকাপাকি ভাবে মুম্বাইতে থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। সেই সময় আমি নতুন কাজ খুজছি, বিভিন্ন হাউসে যোগাযোগ করছি, এমন সময় একদিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুলায়াম সিং যাদবকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখি। অবাক হয়ে যাই ওই বিশ্লেষণ মূলক আলোচনা শুনে! এই প্রথম মুলায়ম সিং সম্বন্ধে ভালো করে জানলাম। জীবনের প্রতিটা ধাপেই টুইস্ট। যেন সিনেমার জন্য সাজানো স্ক্রিপ্ট! সেদিন থেকেই এই বায়োপিক বানানোর ভাবনা মাথায় আসে। সেই মতই প্রোডিউসার খোঁজার পর্ব শুরু। এরপর বন্ধু মীনা শেঠি মন্ডলকে আমার ইচ্ছের কথা জানাই। মীনা আমার আগের ছবির প্রোডিউসার ছিলেন। ওঁর বিষয়টা পছন্দ হয় এবং ওঁর কোম্পানি 'এম এস ফিল্মস অ্যান্ড প্রোডাকশন' এই ছবিটা প্রোডিউস করার দায়িত্ব নেয়।
একজন সাধারণ ছেলের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প--
অত্যন্ত সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও এত বড় একজন রাজনীতিবিদ এবং মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার জার্নিটার পরতে পরতে রয়েছে চমক। পরাধীন ভারতে জন্মেছিলেন। সেই সময় পলিটিক্যাল পরিবার এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই কেবল পলিটিক্সে আসতে পারতেন। আমজনতার সেই সুযোগ ছিল না। মুলায়ম তখন বিএড পাশ করেন নিজের চেষ্টায়। অসম্ভব ভালো কুস্তি করতেন। ওঁর বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে খেলা নিয়েই থাক। কিন্তু কুস্তি করে টাকা পয়সা রোজগারের তেমন সুযোগ ছিল না তখন। তাই পড়াশুনা করে চাকরি করতে আরম্ভ করেন নিজের কলেজেই। তখন ইন্দিরা গান্ধী সরকার। সেই সময় ডক্টর রামমোনহর লুইয়া- ভারতের একজন দাপুটে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনি জলের ট্যাক্স নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনে মুলায়ম সিং অংশগ্রহণ করেন এবং ডক্টর রামমোনহর লুইয়ার খুব কাছাকাছি চলে আসেন। এখান থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা। তখন আরও একজন নেতা ছিলেন নাত্থুরাম। তিনি বিধায়ক ছিলেন। নাত্থুরামই ছিলেন মুলায়মের সিং এর রাজনৈতিক গুরু। এদিকে রামমোনহর লুইয়া মারা যাওয়ার পর চৌধুরী চরণ সিং মুলায়াম সিং এর মাথায় হাত রাখেন। কিন্তু তাঁর ছেলে অজিত সিং এর সঙ্গে মুলায়ম সিং এর সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। এরপরই শুরু হয় বিভিন্ন ঘটনা। পরবর্তীতে তিনি বিধায়ক হন, সেন্ট্রাল মন্ত্রী হন এবং মুখ্যমন্ত্রী হন। এর মাঝে জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, ৭৫-এর এমার্জেন্সি, কারাবাস সহ প্রচুর ঘটনা। বায়পিকে এই জার্নিটাই তুলে ধরেছি। উনি এতটাই জনপ্রিয় যে, নেতেজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পর আজকের স্বাধীন ভারতে একমাত্র মুলায়ম সিং যাদবকেই ‘নেতাজী’ বলে সম্বোধন করা হয়। ছবিতে মুলায়াম সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন অমিত শেঠি।
ছয় হাজার ক্রাউড নিয়ে শুটিং--
বলিউডে একটা ছবির কাজ করলেও আমার কমফোর্ট জোন কিন্তু টলিগঞ্জ পাড়া। তাছাড়া এই ছবির বিষয় যথেষ্ট জটিল। প্রচুর রিসার্চ ওয়ার্কের প্রয়োজন ছিল। একজন অত্যন্ত পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বায়োপিক, তাই সব সময় মাথায় রাখতে হয়েছে ছবির অথেন্টিসিটি সম্বন্ধে। এছাড়া ছবিতে ছয় হাজার ক্রাউড। কাস্টিংও অনেক। বেশির ভাগটাই আউটডোর। তাই টিম বেশ বড়। এত বড় ইউনিট নিয়ে কাজ করার নানারকম চাপ তো ছিলই। আমরা রেইকি করেছি প্রায় এক মাসের ওপর। উত্তর প্রদেশ, মুম্বই, পুনে,এবং পঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় ছবির শুটিং হয়েছে। লখনউতে ছিলাম অনেকটা সময়। সেখানে অখিলেশ যাদব সহ সমাজবাদী পার্টির সকলের কাছ থেকেই অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। মুলায়াম সিং যাদবের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে সেই সময়।
প্রেক্ষাপট লখনউ-
বায়োপিকের ক্ষেত্রে অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ও সমান গুরুত্বপূর্ণ , যাতে কোথাও কোনও ফাঁক না থাকে সেদিকে নজর রাখা জরুরি। আমি, আমার সহকারিরা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিওপি, কস্টিউম ডিজাইনার, মেকআপ আর্টিস্ট, আর্ট ডিরেক্টর, সবাই মিলে ২০দিন লখনউতে ছিলাম রেইকির সময়। ওই পরিবেশ, ওখানকার মানুষের জীবনযাপন, কালচার, লাইফ স্টাইলের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য। এই ছবিতে কস্টিউম এবং লুকে বিশেষ করে নজর দেওয়া হয়েছে যাতে সিনেমা হলে বসে, গল্পের সময়টার সঙ্গে মানুষ চট করে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। ছবিতে কাজ করেছেন বলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতারা।
বাঙালিরা বলিউডে রাজ করবে একদিন--
ছবির টিম মেম্বার যখন সিলেক্ট করা হচ্ছিল তখন দেখলাম প্রচুর ইয়ং বাঙালি ছেলে মেয়ে বলিউডে কাজ করছে। মনে হচ্ছিল একদিন বাঙালিরাই বলিউড শাসন করবে। এটা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। লকডাউন শেষ হলে ছবির মিউজিক রিলিজ করবে। তারপরই মুক্তি পাবে এই বায়োপিক।