পর্দার নেপথ্যের শিল্পীরা অনেক সময়ই থেকে যান খ্যাতির অন্তরালে। যদিও তাঁদের ছাড়া অচল স্টুডিওপাড়া। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়াটাই যাঁদের গোটা জগত, খ্যাতির আড়ালে থেকেও অবিরত যাঁরা কাজ করেছেন সিনেমাকে দর্শকদের কাছে উপস্থানযোগ্য করে তুলতে সেই দামী মানুষগুলোরই একজনকে হারাল টলিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি।
মঙ্গলবার রাতে করোনা কেড়ে নিল টলিগঞ্জের অন্যতম গুণী এক টেকনিশিয়ান, সুকান্ত চক্রবর্তীকে। যাঁকে বিশ্বজিত বা বিশুদা নামেই একডাকে চেনে টলিপাড়া। চিত্রগ্রাহক গোপী ভগতের একনিষ্ঠ সহকারী তিনি। গত সপ্তাহেও বোলপুরে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কবাডি কবাডি’ ছবির শ্যুটিং সেটে কাজ করেছিলেন সুকান্ত চক্রবর্তী। গত ২১ তারিখ কলকাতায় ফেরে পুরো টিম। এরপর আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশুদা, জানা যায় করোনা আক্রান্ত তিনি। গতকাল পরিস্থিতি আচমকা বিগড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
ক্যামেরার সেট-আপ সামলানো থেকে, সেটের লাইটিং ঠিক আছে কিনা দেখে নেওয়া সবটাই দেখত বিশুদা। তিনি রেডি স্যার বললে তবেই শুরু অ্যাকশন। তবে সেই ডাক আর শোনা যাবে না, আক্ষেপ অভিনেত্রী সুদীপা চক্রবর্তীর।
ফেসবুকের দেওয়ালে তিনি লেখেন-'বিশুদাও চলে গেলো....!!!! এটা মানা যায়? তোমার হাসিমুখ চোখে ভাসছে বিশু দা... তোমার ঠাট্টা ইয়ার্কি গুলো কানে ভাসছে... শট এর আগে ডিরেক্টরকে "Ready sir" বলা টা কানের ঠিক পাশে বাজছে... কি হচ্ছে !!!?? কিছু আর বুঝতে পারছি না। আজ টলিগঞ্জ তাঁর অন্যতম সেরা এক টেকনিশিয়ানকে হারাল'।
পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ওপেন টি বায়োস্কোপ-এরও অংশ ছিলেন প্রয়াত টেকনিশিয়ান। এদিন ফেসবুকের দেওয়ালে শোকপ্রকাশ করে পরিচালক লেখেন- বিশ্বজিৎ এর চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া খুব মুশকিল। গোপীদার ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট সবসময়। ওপেন টি ‘র অজস্র শট ওর নেওয়া।যে কোনও অবাস্তব প্ল্যানেও বিশুর হাসিমুখ, চিন্তা কোরো না, হয়ে যাবে।ঠাট্টা ইয়ার্কিতে সরগরম করে রাখত সেট।কিন্তু এই ইয়ার্কিটা নেওয়া গেল না বিশ্বজিৎ। অনেক সিনেমা বাকি ছিল।অনেক শট। তার আগে নিজে নিজে প্যাক আপ বলে দেওয়া খুব দরকার ছিল বুঝি !'
সোহম-অরুণিমা অভিনীত ‘১৭ সেপ্টেম্বর’ ছবিতে বিশুদার সঙ্গে কাজ করেছেন পরিচালক অমিতাভ ভট্টাচার্য। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে তিনি জানান, ‘সত্যি বলতে ভাবতেই পারছি না, এই তো সেদিন…এই মাসের শুরুতে একটা বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং করলাম বিশুদার সঙ্গে। কত আড্ডা হল, গল্প হল। বিশুদার মতো মানুষের চলে যাওয়াটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বড় ক্ষতি। করোনা সব ওলোট-পালোট করে দিচ্ছে। টলিগঞ্জের অন্যতম সেরা এক টেকনিশিয়ান আজ চলে গেল’।
‘পোস্ত’,'তারিখ', ‘হীরালাল’, থেকে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘লক্ষ্মীছেলে’,'আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা'-র মতো ছবিতে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছেন সুকান্ত চক্রবর্তী ওরফে বিশ্বজিৎ।