পয়লা বৈশাখ- বাঙালির নতুন বছর। আর নতুন বছর মানে নতুন জামাকাপড়, জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা আর গান। সঙ্গে দু-চারটে নতুন বাংলা ছবি থাকলেও মন্দ হয় না। তবে এবছরের ছবিটা একদম আলাদা। ১৪২৬ সালের বিদায় পর্ব জুড়ে বিশ্বে করোনার কালো ছায়া, নতুন বছরটাও করোনা আতঙ্কের মাঝেই শুরু করবে হুজুগে বাঙালি। এই বছর পয়লা বৈশাখ আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির একলা বৈশাখ।
১৪২৭-এর শুরুটা স্বাভাবিক ছন্দে শুরু হলে এই সময় হলে চলত দুটো বাংলা ছবি। নতুন বাংলা বছর উপলক্ষ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল কোয়েল মল্লিকের 'রক্ত রহস্য' ও আবির-সোহিনীর 'আগন্তুক'। দুটোই পুরোদস্তুর থ্রিলার। কিন্তু পর্দার বাইরে এখন কোয়ারেন্টাই লাইফের থ্রিল অনুভব করেই সময় কাটাচ্ছে ঘরবন্দি বাঙালি। কারণ করোনা মোকাবিলায় এখন এটাই একমাত্র পথ। এছাড়াও এপ্রিলের শুরুতেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল রাজ চক্রবর্তীর 'ধর্মযুদ্ধ'র।
ছবি মুক্তির জন্য বাঙালি পরিচালকদের সবচেয়ে পছন্দের সময় হল-গরমের ছুটি (মে মাস), পুজোর ছুটি ( অক্টোবর মাস) এবং শীতের ছুটি (ডিসেম্বর মাস)। তাই বাংলা ছবির হালখাতা মন্দায় অনেক বছর ধরেই। স্মৃতির সরণি বেয়ে হাঁটলে গত এক দশকে খুব বেশি উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবি মুক্তি পায়নি নতুন বাংলা বছরে, সেই নিরিখে ব্যতিক্রম ১৪২৬। হ্যাঁ, এই বিদায়ী বছরের শুরুতেই মুক্তি পেয়েছিল দুটো স্মরণীয় বাংলা ছবি- সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভিঞ্চিদা’ এবং চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘তারিখ’। একটা পুরোদস্তুর থ্রিলার আর অন্যটা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় যাপনের গল্প।
সৃজিতের পুজো রিলিজ গুমনামীর চেয়ে কম ব্যবসা সফল হলেও ভালোই সাড়া ফেলেছিল ভিঞ্চিদা। সব মিলিয়ে বক্স অফিসে এই যুযুধান লড়াই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছে সিনেপ্রেমী বাঙালি।
২০১৮ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় শুক্রবার, নতুন বাংলা বছর উপলক্ষ্যে মুক্তি পেয়েছিল দেব-রুক্মিনী জুটির 'কবীর' ও অঞ্জন দত্তের 'আমি আসব ফিরে'। সেই সময় দেব এইসময়কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন 'আসলে বড়দিন বা নিউ ইয়ার -এ ছবির মুক্তি নিয়ে আমরা উত্তেজিত থাকি৷ কিন্তু বাঙালিদের কাছে পয়লা বৈশাখ তো বড় উত্সব৷ এই সময় ভালো বাংলা ছবির মুক্তি পাওয়া জরুরি'।
১৪২৪ ও ১৪২৩ সাল উপলক্ষ্যে বাঙালিকে দুটো পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল ছবি উপহার দিয়েছিল 'ওয়ান' ও 'পাওয়ার'। নতুন বাংলা বছরে দক্ষিণী ছবির রিমেক খুব বেশি দাগ কাটেনি বাঙালি দর্শকদের মনে।
এগুলো ছাড়া স্মরণশক্তিতে জোর দিলে গত কয়েক বছরে নতুন বাংলা বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবি বলতে মনে আসবে একমাত্র ১৪২০ সালের কথা। হ্যাঁ, ২০১৩-র এপ্রিলে নতুন বাংলা বছরে মুক্তি পেয়েছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের শব্দ। যা এককথায় বাংলা ছবির মাইলস্টোন। শব্দ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল এই পরিচালকের ফিল্মি কেরিয়ারেরও। এই বছরই মুক্তি পায় অপর্ণা সেনের গয়নার বাক্স। বাঙালির মনের মণিকোঠায় আজও জায়গা করে রেখেছে এই ছবি।
নতুন বাংলা বছরে করোনা সংকট কাটিয়ে উঠে আবারও ছন্দে ফিরুক টলিগঞ্জ। এই কামনা যেমন রয়েছে, তেমনই আশা এবার থেকে দূর্গা পুজো, ক্রিসমাসের পাশাপাশি বাঙালির নতুন বছরকে মাথায় রেখেও ছবি মুক্তির পরিকল্পনা একটু বেশি পরিমাণে করবেন পরিচালক-প্রযোজকরা।